দোকানে বসেও বাঁশি বাজান কাঞ্চন

একসময় গিয়েছিলেন কলকাতায়। হাতিবাগানে মোহনলাল শর্মার কাছে কিছুদিন তালিম নেন তিনি। ১৯৮৩ সাল থেকে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে শিখেছেন। মাসে দু-তিন বার করে যেতেন। শুধু বাঁশি নয়, একতারা, খোল, তবলাতেও সাবলীল কাঞ্চন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৬
Share:

বাদক: বাঁশি বাজাচ্ছেন কাঞ্চন সরকার। নিজস্ব চিত্র

সংসার চালাতে পেশা করেছেন জুতো বিক্রি আর সেলাইকে। কিন্তু কাজের সময়টুকু ছাড়া তিনি ডুবে থাকেন তাঁর নেশায়। নেশা বলতে বাঁশি বাজানো। জলপাইগুড়ির নিউটাউন পাড়ার বাসিন্দাদের সকালে ঘুম ভাঙে কাঞ্চন সরকারের বাঁশির সুরেই।

Advertisement

বয়স তখন সাত কি আট। শান্তিপাড়ার জনৈক বিশুদা বাঁশি বাজিয়ে ঘুরতো শহরময়। এই পাড়ায় এলে তা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনত বছর সাতেকের কাঞ্চন। জানালেন, একদিন শখের বশে বাঁশের কঞ্চি কেটে নিজেই বানালেন বাঁশি। সেই শুরু, বলছেন ষাট পার করেও একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি রেওয়াজ। শান্ত মনে বাঁশি বাজানোর জন্য কর্মচারীও রেখেছেন। কাঞ্চনবাবু বলেন, ‘‘বাঁশি বাজানোর ইচ্ছে হলে, কর্মচারীই দোকান সামলায়।’’ শহরের মার্চেন্ট রোডে মসজিদের সামনের ফুটপাতে তাঁর দোকান। তাঁর বাঁশির সুরে মোহিত ওই এলাকার অন্য দোকানিরাও। তাঁদেরই একজনের কথায়, ‘‘কাঞ্চনদা বাঁশি বাজালে লোক জড়ো হয়ে যায়। দারুণ বাজায়।’’ কাজে অসুবিধে হয় না কখনও? কাঞ্চনবাবু জানালেন, ফুটপাতের জুতোর ব্যবসায় তেমন লাভ আর নেই। বড় দোকান আর শপিং মলেই ছুটছেন মানুষজন। বলছেন, ‘‘চা বাগান ও নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ আসেন দোকানে। তাঁদের দৌলতেই চলে যাচ্ছে সংসার। বাঁশি বাজালে মন ভাল থাকে।’’

একসময় গিয়েছিলেন কলকাতায়। হাতিবাগানে মোহনলাল শর্মার কাছে কিছুদিন তালিম নেন তিনি। ১৯৮৩ সাল থেকে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে শিখেছেন। মাসে দু-তিন বার করে যেতেন। শুধু বাঁশি নয়, একতারা, খোল, তবলাতেও সাবলীল কাঞ্চন।

Advertisement

একসময় প্রচুর অনুষ্ঠান করেছেন, এখনও করেন মাঝেমধ্যে। ছাত্র, যুব উৎসবে বিচারকের দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু জানালেন সেভাবে জোটেনি সরকারি সম্মান। তবে তাতে তাঁর আক্ষেপ নেই। পুরস্কার তিনি চান না। শুধু চান, ধ্রুপদী-র দিকে ঝুঁকুক নবীন প্রজন্ম। এটাই প্রার্থনা কাঞ্চনের। আর যতদিন পারবেন ততদিন বাঁশির সুর ছড়িয়ে দিতে চান কাঞ্চন। তাই বিনে পয়সায় শেখাচ্ছেন উৎসাহীদের। সেই উৎসাহীদের তালিকায় রয়েছে শহরে চাকরি সূত্রে অন্য জায়গার মানুষরাও।

অশীতিপর মা, দাদা, ভাই, বৌদি, স্ত্রী, ছেলে নিয়ে কাঞ্চনবাবুর যৌথ পরিবার। সদস্য সংখ্যাটা দশের কম নয়। স্ত্রী নীতা সরকার বলেন, ‘‘বাড়িতে গান বাজনার চল রয়েছে। তবে ওনারমত এতটা কেউ নয়।’’ কাঞ্চনবাবুর ভগ্নিপতি প্রদ্যুৎ দত্ত বলেন, ‘‘কাঞ্চনের বাঁশির সুর মনকে ভাল করে দেয়। অভাবের কারণে ম্যাট্রিকুলেশনের পরে পড়তে পারেননি। কিন্তু ছেলের বেলায় কোন খামতি রাখেননি।’’ এনবিইউ থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর করছে কাঞ্চনবাবুর ছেলে কৌস্তভ। বাবার কাছ থেকে তিনিও পেয়েছে গানবাজনার প্রতি ভালবাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন