এত সোনা কি চিনের পথ ধরে?

বহু বছর আগে এই পথ দিয়ে চলত রেশমের আনা-নেওয়া। তার পরে সোনার মতো মহার্ঘ পণ্যও গিয়েছে এই দুর্গম রাস্তা ধরে। গোয়েন্দাদের এখন সন্দেহ, প্রাচীন সেই ‘সিল্ক রুটের’ পাশে ফের চালু হয়েছে ‘গোল্ড রুট’।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৬
Share:

বহু বছর আগে এই পথ দিয়ে চলত রেশমের আনা-নেওয়া। তার পরে সোনার মতো মহার্ঘ পণ্যও গিয়েছে এই দুর্গম রাস্তা ধরে। গোয়েন্দাদের এখন সন্দেহ, প্রাচীন সেই ‘সিল্ক রুটের’ পাশে ফের চালু হয়েছে ‘গোল্ড রুট’। দশ হাজার ফুটের অনেক বেশি উচ্চতার ‘রুট’ দিয়ে প্রবল প্রতিকূল আবহাওয়াতেও চলছে এই ‘লেনদেন’। সম্প্রতি শিলিগুড়ি এবং তার আশপাশের অঞ্চলে বেশ কয়েক বার বেআইনি সোনা আটকের পরে পাচারকারীদের জেরা করে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশ ও গোয়েন্দাদের।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, দু’দেশের পণ্য লেনদেনের সময়েই নানা কায়দায় লুকিয়ে-চুরিয়ে চিন থেকে তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চল হয়ে ভারতে ঢুকছে সোনা। সেখান থেকে সোজা শিলিগুড়ি। গোয়েন্দা অফিসারদের একাংশ জানান, বছরের অধিকাংশ সময় বরফে মুড়ে থাকা এলাকা দিয়ে যাতায়াত মানেই ভারী শীতপোশাক। কোন শীতবস্ত্র, স্নো-বুট কিংবা টুপির মধ্যে সোনার বাট ঢুকে পড়ছে, তা সব সময়ে ধরতেও পারেন না নজরদারিতে থাকা রক্ষীরা। তুষারপাতের সময়ে বা আচমকা বৃষ্টি শুরু হলে সেই সুযোগও কাজে লাগায় পাচারকারীরা। তাতেই গত এক বছরে ওই রুট দিয়ে অনেক সোনা চোরাপথে এ দেশে ঢুকেছে বলে অনুমান করছেন গোয়েন্দারা।

চলতি বছরের জুন মাসে ৩২ কেজি সোনার বাট-সহ ধরা হয় ৩ জনকে। গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, ধৃতেরা তিন জনই মহারাষ্ট্রের। পুলিশের বক্তব্য, তাদের জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, নাথুলা দিয়ে শেরেথাং হয়ে সোনা পৌঁছলে তাঁরা সেখান দিয়ে গাড়ি নিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছন। শিলিগুড়িতেই তাঁদের ধরেন কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দারা। এর পরে ধরা পড়েন সিকিমের দুই ব্যবসায়ী নিম লামু শেরপা, দাসাং ভুটিয়া লাচুংপা। পুলিশের দাবি, তাদের কাছে জেরায় ওই দু’জন জানিয়েছেন, পণ্য লেনদেনের বকেয়া বাবদ চিনা ব্যবসায়ীরা তাঁদের সোনার বাট দেন।

Advertisement

গত ২১ সেপ্টেম্বর সোনম তোগবে ভুটিয়া নামে এক জনকে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দারা ২৭ কেজি সোনা-সহ গ্রেফতার করেন। ঘটনাচক্রে, সোনম নাথুলা সীমান্তের আমদানি-রফতানিকারীদের সংগঠনের অন্যতম কর্তা। তিনি বেতের জিনিস রফতানি করেন চিনে। সন্দেহ, বেতের জিনিসপত্র, শীতপোশাকের আড়ালে বিপুল পরিমাণ সোনা পাচারের ছক কষেছিলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের আইনজীবী ত্রিদিব সাহা জানান, সাধারণত ভুটান, মায়ানমার থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি দিয়েই সোনা পাচারের ঘটনা বেশি ধরা পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘নাথুলা সীমান্ত খোলার পরে চিন থেকে চোরাকারবারিরা সেই রুটেও সোনা পাচারের জন্য সক্রিয় বলে অভিযোগ।’’

সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর আইনি উপদেষ্টা কেটি গ্যালসেন তাই বলেন, ‘‘দুর্গম নাথুলা সীমান্তে সোনা পাচারকারীরা নজর দিলেও বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না। সীমান্তে সেনা নজরদারি রয়েছে। পুলিশও ওই পথে নজরদারি বাড়িয়েছে।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন