ভোরের আলো স্পষ্ট না ফোটায় আবছা দেখা যাচ্ছে পথ। আলো জ্বালিয়ে দশ চাকার লরি নিয়ে ছুটছেন চালক ভীম সিংহ। আচমকা রাস্তায় বেঞ্চ পাতা দেখে ব্রেক কষলেন। সঙ্গে সঙ্গে ঝোপ থেকে উদয় হয়ে তাঁর হাতে ৫০০ টাকা লেখা চাঁদার রশিদ ধরিয়ে দিলেন একদল যুবক। গালাগালির ভয়ে যুবকদের অনেক বুঝিয়ে কোনও মতে ২০০ টাকা দিয়ে লরি নিয়ে বেরিয়ে গিলেন ভীম। কিন্তু গাড়ির চাকা ৫০০ মিটার গড়াতে না গড়াতেই ফের রাস্তায় বেঞ্চ। ফের থামাতেই হল লরি।
কালীপুজো উপলক্ষে এমনই কায়দায় চাঁদা আদায় চলছে মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়কে। চাঁদা নিয়ে অতিষ্ঠ গাড়ি চালক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও। শুধু মালদহ নয় এই পরিস্থিতি রায়গঞ্জ বা বালুরঘাট, হিলিতেও। চাঁদার জুলুমবাজি চললেও পুলিশে হয় কেউ মৌখিক অভিযোগ করছেন, কেউ তাও করছেন না। কারণ নালিশ করলে পরে সমস্যায় পড়লে পুলিশ যদি পাশে না থাকে, এমন সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই।
যেমন দক্ষিণ দিনাজপুরে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জোর করে ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় চললেও ভয়ে কোনও চালক পুলিশে অভিযোগ জানান না। দক্ষিণ দিনাজপুরের ডেপুটি পুলিশ সুপার ধীমান মিত্র বলেন, ‘‘জুলুম করে কালীপুজোর চাঁদা তোলার একটি অভিযোগও থানায় জমা পড়েনি।’’ অথচ চালকদের একাংশ জানান, জুলুম চলছেই।
রায়গঞ্জে অভিযোগ, জাতীয় সড়কে গাড়ি থামিয়ে, আবার কোথাও রাজ্যসড়ক ও পাড়ার রাস্তায় টোটো, মোটরবাইক-সহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে পুজোকমিটির সদস্যরা কালীপুজোর চাঁদা তুলছেন গত এক সপ্তাহ ধরে। তার আগে ১ অক্টোবর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে কালীপুজোয় চাঁদা আদায়ে বিভিন্ন ক্লাবের জুলুমবাজি শুরু হয়েছে দাবি করে রায়গঞ্জে আন্দোলনে নামেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। কালিয়াগঞ্জে এক টোটো চালক চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় একটি ক্লাবের সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ।
চাঁদার জুলুমে পুজোর তিন দিন আগে থেকে বালুরঘাট শহরের বেশ কিছু মণিহারি দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মালপত্র নিয়ে শহরে ঢুকছে না ট্রাক-লরিও। এক মণিহারি দোকানির বক্তব্য, শহরের সমস্ত দোকানের চাঁদা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে একসঙ্গে ক্লাবগুলিকে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই চাঁদাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে দোকানে ক্রেতাদের সঙ্গে ভিড় করছেন চাঁদা আদায়কারীরা। চলছে চাপ। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হরেরাম সাহার অবশ্য দাবি, পুজোর বহর অনুযায়ী প্রতি বছর ক্লাবগুলির চাঁদা বাড়ানো হয়।
মালদহের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনে জানানো হলেও কাজ হয় না।’’ মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষের কথায়, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া রাস্তা আটকে চাঁদা বন্ধ করতে নিয়মিত টহলদারি চালানো হচ্ছে। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘বাসিন্দারা গোপনে জুলুমবাজির তথ্য দিতে পারেন। তথ্যদানকারীদের নাম গোপন রাখা হবে।’’