অবক্ষয়ের দায় নিন নেতারাও

এত বর্ষিষ্ণু একটি জেলার দেড়শো বছরেও কেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না, তার ওষুধ বাতলাতে হবে। তাঁদের দাবি, এমন অবক্ষয়ের দায় এড়াতে পারেন না প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতারাও৷

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৫
Share:

ইতিহাস: জলপাইগুড়ি জেলা গঠন নিয়ে দেড়শো বছর আগের সেই সরকারি বিবৃতি। নিজস্ব চিত্র

দেড়শো বছরে পা দিল জলপাইগুড়ি জেলা৷ অবিভক্ত বাংলায় ইংরেজদের তৈরি করা শেষ জেলা হিসাবে জলপাইগুড়ি এক সময় ভারে ভারে অনেকটাই এগিয়েছিল৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবক্ষয়ের দিকেও এগিয়েছে এই জেলা৷ পড়াশোনা থেকে শুরু করে চিকিৎসা—প্রায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখন জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের ছুটতে হচ্ছে শিলিগুড়িতে৷ ফলে আশাহত স্থানীয়রা৷ তাদের কথায়, এত বর্ষিষ্ণু একটি জেলার দেড়শো বছরেও কেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না, তার ওষুধ বাতলাতে হবে। তাঁদের দাবি, এমন অবক্ষয়ের দায় এড়াতে পারেন না প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতারাও৷

Advertisement

১৮৬৯ সালে রংপুর জেলার একাংশ ও ডুয়ার্সের ১৮টি দুয়ারের ১১টিকে নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা গঠিত হয়৷ জেলার ইতিহাসবিদদের কথায়, ইংরেজরা এরপর আর অবিভক্ত বাংলায় কোনও জেলা তৈরি করেননি৷ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলা রাজশাহী বিভাগের সদর দফতর হিসাবে ছিল৷ দেশভাগের পর জলপাইগুড়ি প্রেসিডেন্সি বিভাগে গেলেও, ১৯৬২ সালে আলাদা জলপাইগুড়ি বিভাগ তৈরি হয়৷

জলপাইগুড়ির বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, চা বাগানকে ঘিরে অর্থনীতি থেকে শুরু করে সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই জলপাইগুড়ি উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলো থেকে এগিয়ে ছিল৷ কিন্তু ৬৮-র বন্যার পর জেলার বেশিরভাগ চা বাগানের মালিকানার পরিবর্তন হল৷ বাগানগুলোর সদর দফতর জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়ে গেল৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম রেলের ক্ষেত্রেও রানিনগরের বদলে গুরুত্ব পেল নিউ জলপাইগুড়ি৷ মেডিক্যাল কলেজও জলপাইগুড়িতে হল না৷ চলে গেল শিলিগুড়িতে৷ জেলার কিছু অংশ চলে গেল শিলিগুড়ি পুর নিগমে, আবার শিলিগুড়ি কমিশনারেট গঠনের পর সেখানেও জেলার কিছু অংশ যায়৷ আনন্দবাবুর কথায়, ‘‘৬৮ সালের এই বন্যাকে একটা ল্যান্ডমার্ক ধরা যেতেই পারে৷ কারণ এরপরই জলপাইগুড়ির অর্থনৈতিক গৌরবের সূর্য অস্তমিত হতে শুরু করে৷’’

Advertisement

জলপাইগুড়ির প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল যখন শিলিগুড়ির ছেলে-মেয়েরা জলপাইগুড়িতে পড়াশোনা করতে আসতেন। আর এখন সামান্য টিউশন পড়তেও জলপাইগুড়ির অনেক ছেলে-মেয়ে শিলিগুড়ি যায়৷ অন্য ক্ষেত্রগুলি না হয় বাদই থাকল৷’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আসলে বছরের পর বছর ধরে জলপাইগুড়ি নানা ক্ষেত্রে বঞ্চিত থেকেছে৷ এই বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ ছিল ব্যাপক হারে উন্নতি ও রেলপথ ও সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন৷ সেটা না হলে জলপাইগুড়ির পুরানো গরিমা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়৷’’

জলপাইগুড়ির প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘দেশভাগের পরে জলপাইগুড়ির সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ভেঙে পড়ে৷ তাতেই অবক্ষয়ের শুরু।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন