সেবক রোডের আগুনে পুড়ে দুটি কিশোরের মৃত্যুর পরেই শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক চাপানউতর। গোটা ঘটনায় বেআইনি নির্মাণ ও যাচাই না করে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়াকে দুষেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সিপিএম পরিচালিত পুরসভাকে এর জন্য দায়ী করেছেন তাঁরা। পুরসভার পক্ষ থেকে সমস্যার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরাও পূর্ত দফতরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। পুরসভার গাফিলতিতেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, জেলা তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ পালরা। সমস্যার কথা জানলে আগেই পূর্ত দফতরের আগেই করা উচিত ছিল বলে পাল্টা দাবি করেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
গৌতমবাবুর দাবি, ‘‘অশোকবাবু সারা রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েছেন, ওঁর শিলিগুড়ির দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই। নালা দখল করে নির্মাণ হচ্ছে, পুরসভা দেখছে না।’’ যদিও অশোকবাবুর দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার গত পাঁচ বছরে কিছুই করেনি। পূর্ত দফতরের জমিতে ওই দোকানগুলি রয়েছে। ইচ্ছে করলে উঠিয়ে দিতে পারত। কিন্তু ওঁরা রাজনীতি করার সুযোগ হারাতে চাননি।’’ তবে আইনি পথে মৃত দুই শিশুর পরিবারকে সাহায্য করা হবে। তবে ভোট প্রক্রিয়া শেষ হলে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন। তবে সমস্যা যে রয়েছে, তা স্বীকার করে সব দলকে নিয়ে বেআইনি দখল উচ্ছেদ করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘ভোট পার হলেই এগুলি বন্ধ করতে সব দলের কাউন্সিলরদের ডেকে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করতে হবে।’’ ঘটনার পর এলাকায় যান তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ পাল, পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পারিষদ কমল অগ্রবালরা।
রবিবার গভীর রাতে আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া দোকানগুলির গোটাটাই বেআইনি নর্দমা দখল করে তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। দু’টি বাচ্চা ভিতরে পুড়ে মারা যাওয়ার পরেও পুরসভার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করা হচ্ছে কেন, অভিযোগ বাসিন্দাদের। গত প্রায় ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেবক রোডের বিস্তীর্ণ এলাকায় কোথাও বেআইনিভাবে পুরসভার হাইড্রান্ট দখল করে একাধিক ব্যক্তি ব্যবসা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। দখল করা গুমটি দোকান, প্রতিটিই বেশ কয়েকবার হাত বদল হয়ে গিয়েছে মোটা টাকায় বলে অভিযোগ। এমনকী এর আগেও পুরসভার কর্মীরা ড্রেন পরিষ্কার করা যাচ্ছে না বলে পুরসভায় অভিযোগ জানানোর পরেও রাজ্যের শাসক দলের চাপেই সেই কাজ বন্ধ করা যায়নি বলে জানানো হয়েছিল। বহু জায়গায় নতুন করে নির্মাণ শুরু হয়েছে।
রবিবারের ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেই ঝুপড়ির পিছনে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থার পুরোনো বহুতল। ওই সংস্থার ম্যানেজার চন্দ্র ভান জানান, ‘‘এর আগেও পুরসভা, জেলাশাসক সহ সমস্ত সরকারি স্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে, আমাদের ভবনের সামনে এতগুলি দোকান তৈরি হয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক মদতে। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। নতুন করে কয়েকদিন আগে ফের ভবনে ঢোকার রাস্তায় নির্মাণ করা শুরু করেছে কয়েকজন। থানায় অভিযোগ দায়ের করেও কোনও ফল হয়নি।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের রবি রায় কোনও দায়িত্ব নিতে চাননি। তিনিও জানান, পুরসভায় একাধিকবার জানানো হয়েছে কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। স্থানীয় এক বাসিন্দা সুচিন্ত্য দাসের অভিযোগ, ‘‘শুধু এই এলাকা নয়, সেবক রোডের একটি বড় শপিং মলের উল্টো দিকে ফুটপাথ দখল করে বেআইনিভাবে স্থায়ী পরিকাঠামো গড়ে ব্যবসা শুরু করেছেন কিছু লোক। এদের কোনও কাগজপত্র বা কিছু নেই।’’ এই অভিযোগ তুলেছেন দমকলের অফিসাররাও।
শিলিগুড়ির ফায়ার স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিষ্ণুপ্রসাদ ধর বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও গুমটিতে কোনও ফায়ার লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এদের দোকানের কোনও কাগজ নেই। অথচ ফায়ার লাইসেন্স ছাড়াও তাঁরা ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা মারাত্মক।’’
হোটেলের ক্ষেত্রে ফায়ার লাইসেন্স বাধ্যতামূলক বলে দাবি করেন পুরসভার ট্রেড লাইসেন্সের মেয়র পারিষদ। তিনি বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে কাউন্সিলরের অনুরোধে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হলেও খাবারের হোটেলের ক্ষেত্রে ফায়ার লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’