শিলিগুড়ি শহরের নানা জায়গায় নর্দমার হাল এমনই। —নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক বছর ধরেই শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি, এনসেফ্যালাইটিসের আক্রমণে শহরের বাসিন্দারা এমনিতেই উদ্বিগ্ন। তার উপর শহরের নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশা তাঁদের উৎকন্ঠা আরও বাড়িয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভায় এই মুহূর্তে কোনও পুরবোর্ড নেই। প্রশাসকও নেই। অভিভাবকহীন শহরে নিকাশি পরিস্থিতি দেখতে কারও দায় নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন সচেতন বাসিন্দাদের অনেকেই। নেতা, আধিকারিক কেউই বিষয়টিকে তত গুরুত্ব দিয়ে না দেখাতেই শহরের নিকাশি পরিষেবার হাল এই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের।
শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কয়েকজন জানান, মাঝে মধ্যেই পুরকর্মীদের ডাকাডাকি করতে হয় নর্দমা পরিষ্কার করাতে। গত কয়েক মাস ধরে কোনও কাউন্সিলর নেই। তাই বলারও কেউ নেই। কারও বাড়ির সামনে নিকাশি বন্ধ হয়ে গেলে বা বেহাল হয়ে পড়লে দায়িত্ব বাড়ির মালিককেই নিতে হয়। না হলে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। পুরকর্মীরা কখন ওয়ার্ডে আসছেন, খুঁজে পেতে ডেকে এনে বারবার বলে নর্দমা পরিষ্কার করাতে হয় বাসিন্দাদেরই।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সুশান্ত দাস শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তা ঘাট এবং নিকাশি—উন্নত শহরের এই দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার মধ্যে নিকাশি ঠিক না থাকলে জন স্বাস্থ্য বিপন্ন হবে। শহর অত্যাধুনিক হচ্ছে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুপরিকল্পিত ভাবে নিকাশির ব্যবস্থাও করা দরকার। সেটা কখনও হয়নি।’’
বিগত পুরবোর্ডের প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির মতো শহরের জন্য ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী প্রয়োজন। তাতে যে খরচ হবে পুরসভার একার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে সেই কাজের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। আমরা তাদের সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু সে তো বিশবাঁও জলে পড়ে রয়েছে।’’ শিলিগুড়ি পুরসভা দীর্ঘদিন বামেদের দখলে ছিল। সে সময়ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান গৌতম দেব জানান, তাঁদের সেই পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেটা সময় সাপেক্ষ। তার আগে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সে নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে সেটা যাতে ঠিক মতো কাজ করে, সেটা দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘গত ৩৪ বছরে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। শেষ পাঁচ বছরেও তেমন কোনও কাজ হয়নি। নতুন পুরবোর্ড এলে তাঁরা কী ভাবছেন, সেটা দেখা জরুরি। সেই ভাবে কথা বলে পরিকল্পনা নিতে হবে।’’
সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর তথা বামেদের তরফে মেয়র পদের দাবিদার প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যর দাবি, আগে ৪, ৫, ৩১, ৩২, ৩৩ এই সমস্ত এলাকায় প্রচুর জল জমত। এখন ততটা হয় না। তবে তিনি বলেন, ‘‘এই শহর দ্রুত বাড়ছে। যে ওয়ার্ডে ৪ হাজার লোক থাকার কথা, সেখানে ১৪ হাজার বা তারও বেশি লোক থাকছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিকাশি ব্যবস্থা গড়তে গেলে পুরনো পদ্ধতিতে কাজ করলে চলবে না। আমরা বোর্ড গড়লে পুর দফতরের সাহায্য নিয়ে বিশেষজ্ঞ এনে কী করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হব।’’ তাঁর কথায়, শিলিগুড়ির মাটি বেলে মাটি প্রকৃতির। সে কারণে নিকাশি নালাগুলিতে মাটি পড়ে ভরাট হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে তিনি জানান, যে ওয়ার্ড থেকে তিনি জিতেছেন, সেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নর্দমাগুলির একাংশে ৩ থেকে ৪ ফুট মাটি জমে রয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করার জন্যই এটা ঘটেছে। শিলিগুড়ির বাসিন্দা তথা নাট্য ব্যক্তিত্ব পার্থ চৌধুরীর অভিজ্ঞতা, শহরের অধিকাংশ নালার জল শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পড়বে সেই ব্যবস্থা নেই। পরিকল্পনা না থাকার জন্যই এই পরিস্থিতি। তাঁর কথায়, ‘‘শহরের মাঝে থাকা বিধান মার্কেটে সামান্য বৃষ্টি হলে জল জমে যায়। নর্দমাগুলির কী পরিস্তিতি তা সহজেই বোঝা যায়।’’