North Bengal University

বিশ্ববিদ্যালয় হলেও পঠনের পরিকাঠামো ম্লান উত্তরবঙ্গে

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত, স্থায়ী উপাচার্য নেই। যদিও তার পিছনে নানা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতা, টালবাহানা রয়েছে।

সুপ্রিয় চন্দ

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:০৮
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

উচ্চ শিক্ষার ধারণা স্বাধীন ভারতে এসেছে কার্যত ব্রিটিশ পরিচালিত স্তর ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো থেকে। উত্তরবঙ্গকে বরাবরই শিক্ষা-সংস্কৃতির জায়গা হিসেবে বাইরে যে ভাবে আমরা গর্ব প্রকাশ করি, ঘরের ছবি কি ততটাই উজ্জ্বল? প্রশ্ন অনেক। উত্তরও যে সব অজানা, এমন নয়।

গত এক দশকে এ রাজ্যে সরকার ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৩ থেকে বেড়ে ৩৮ হয়েছে। শতাংশের হিসাবে যা ১৩৮ শতাংশ। এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ক্ষেত্রে পঠনপাঠনের যথাযথ পরিকাঠামো কিন্তু তৈরি হয়নি। ছাত্র ভর্তি হয়েছে, এ কথা ঠিক। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। একের পর এক বিভাগ তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যোগ্য গ্রন্থাগার, গবেষণাগার হয়নি। তার থেকে বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্যের বদলে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রবণতা। ফলে একটা সময়ের পরে ছাত্রছাত্রীর ভর্তির হারও নতুন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কমেছে।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত, স্থায়ী উপাচার্য নেই। যদিও তার পিছনে নানা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতা, টালবাহানা রয়েছে। বাকি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও স্থায়ী শিক্ষকের অভাব, পাঠ্যক্রমের আধুনিকীকরণে ঘাটতি, গবেষণায় তহবিলের সঙ্কট, সে সব মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীদের উন্নত মানের শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না।

উত্তরের উচ্চ শিক্ষা মানচিত্রে এটাই কি কাঙ্ক্ষিত স্বাভাবিক ছবি?

‘মেধা-পরিযান’ উত্তরবঙ্গে একটি বাস্তব সামাজিক চিত্র হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে শুধু শহরের দিকে তাকালে চলবে না। তাকাতে হবে আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা উত্তরবঙ্গের গ্রামগুলির দিকেও। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মালদহ, দুই দিনাজপুরের গ্রামগুলির অনেক ছাত্রছাত্রীকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি, যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকের পরে অনেকটা ‘ক্যাফে’-র মতো নিজের পছন্দ অনুযায়ী স্নাতক স্তরে বিষয় নির্বাচন করেছেন। আবার স্থানীয় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বদলে কলকাতা বা ভিন্‌ রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার জন্যে পাড়ি জমিয়েছেন, এমন সংখ্যাও শহর-গ্রাম নির্বিশেষে প্রচুর। বলা বাহুল্য, বাস্তবতার ধাক্কা এবং খরচের বিলাসিতায় গ্রাম বা শহরতলির অনেক পড়ুয়া পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ছাত্রীদের মধ্যে এই উদাহরণের পিছনে যদিও সমাজ ও অভিভাবকদের মানসিকতাও অনেকটা নির্ভর করে।

উত্তরবঙ্গের উচ্চ শিক্ষায় লিঙ্গ সমতার আলোচনায় এই প্রসঙ্গও বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে গত এক দশকে নতুন ভাবে তৈরি হয়েছে পলিটেকনিক কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ। রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, একাধিক বিএড কলেজ, ল’কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-সহ শিক্ষার একাধিক পরিকাঠামো। প্রভূত সম্ভাবনা থাকার পরেও কেন্দ্রীয় বাজেটে উত্তরবঙ্গে উচ্চ শিক্ষার উন্নতির জন্য থাকতেই পারত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ঔষধ, রাসায়নিক ও কৃষিজাত পণ্যনির্ভর শিল্পের ঘোষণা। আর্ট কলেজ, মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিকল্পনাও করা যেত এত বছরে। কেন্দ্রীয়, রাজ্য দুই সরকারের পক্ষ থেকে আগামী সময়ে ট্যুরিজম বা ম্যানেজমেন্টের মতো বিষয়ের আধুনিক পরিকাঠামোও শিক্ষা-মানচিত্রে নিয়ে আসা দরকারি।

আধুনিক মানুষের জীবন ও সমাজ যেমন বৈচিত্র্যে ভরা, উত্তরবঙ্গের উচ্চ শিক্ষার আলোচনায় সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকগুলিও তেমনই বহুমাত্রিক।

গবেষক, জলপাইগুড়ি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন