পোস্টাল ব্যালট নিয়ে নালিশ, সরব বামেরা

শাসক দলকে সুবিধা করে দিতে পোস্টাল ব্যালট নিয়ে দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হল সিপিএম এবং কংগ্রেস।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০২:১৩
Share:

শাসক দলকে সুবিধা করে দিতে পোস্টাল ব্যালট নিয়ে দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হল সিপিএম এবং কংগ্রেস।

Advertisement

জোটের নেতাদের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি) থেকে শুরু করে বহু সাধারণ কর্মীর কাছে সঠিক সময়ে যেমন পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়নি, বহু জায়গায় আবেদন করার পর ইচ্ছাকৃত ভাবে পোস্টাল ব্যালট দেরিতে পাঠানো হয়েছে। ওই সরকারি কর্মীদের বেশিরভাগই সরকারি শাসক দলের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না থাকায় তা করা হয়েছে। শুধুমাত্র, এনবিএসটিসি-র ক্ষেত্রে জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে কয়েকটি জায়গায় দেরিতে পোস্টাল ব্যালট পাঠানোয় ব্যালট ইস্যু করার নির্ধারিত দিনও পার হয়ে যায়। এতে অনেকেই নিজের পছন্দ মতো প্রার্থীদের ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। গত সোমবার শিলিগুড়ির মিত্র সম্মিলনী হলে কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়ে বৈঠকে বিষষয়টি নিয়ে সরব হন জোটের নেতারা। সরকারি সূত্রের খবর, আজ, বুধবার অবধি পোস্টাল ব্যালট গ্রহণের দিন থাকলেও তা শেষে বাড়িয়ে ভোট গ্রহণের দিন, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা অবধি করা হয়েছে। দার্জিলিং জেলার নিবার্চনীর আধিকারিক তথা জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘যথা সময়ে পোস্টাল ব্যালট সরকারি কর্মীদের পাঠানো হয়েছে। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা অবশ্যই দেখা হবে। পক্ষপাতিত্বের বিষয় নেই।’’

প্রশাসনের একাংশ ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা জোট প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এখনও শিলিগুড়ির পোস্টাল ব্যালটের হিসাব ঠিকঠাক নেই। এখন তো মনে হচ্ছে, শাসক দলকে কিছুটা সুবিধা দিতেই ইচ্ছাকৃত ভাবে এসব করা হয়েছে।’’ অশোকবাবু জানান, তেমন হলে, আইনি পথে যাব।

Advertisement

আবার দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা জোট প্রার্থী শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘শাসক দলের লোকজন তো সরকারি কর্মীদের মধ্যে রয়েছে, তাঁরাই এসব করছেন বলে আমাদের সন্দেহ।’’

দুই দলের অভিযোগ, শুধু মাত্র শিলিগুড়ি কেন্দ্রেই ১৩০০ মতো পোস্টাল ব্যালটের ভোট রয়েছে। সেখানে এখনও ২০০ মতো ব্যালট জমাই পড়েনি। এর মধ্যে অনেকে দেরিতে পেয়েছেন। কেউ কেউ পাননি বলেও জানিয়েছেন। তেমনিই, মাটিগাড়া নকশালবাড়ি কেন্দ্রেও ১০০০ বেশি পোস্টাল ভোট থাকলেও সরকারি তথ্যে ৮০০ কিছু বেশি ব্যালট জমা পড়েছে। দুই কেন্দ্রই অন্তত ৪০০ পোস্টাল ব্যালটের হিসাব এখনও আসেনি। ভোটের দিন প্রশাসনের অফিসারেরা এর সঠিক হিসাব দিতে না পারলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারে।

একই ভাবে পোস্টাল ব্যালট নিয়ে সরাসরি শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস প্রভাবিত এনবিএসটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতারা। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, সংস্থার কর্মীদের একটা অংশকে বেছে বেছে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ৪ এপ্রিল পোস্টাল ব্যালট শিলিগুড়িতে আসলেও তা পাঠানো হয়েছে ১১ এপ্রিল। কর্মীদের নির্ধারিত ডিভিশন থেকে ১৫ এপ্রিল পোস্টাল ব্যালট নেওয়ার দিন থাকলেও তা হয়নি। বেলাকোবা, বালুরঘাট, তপন, কালিয়াগঞ্জের একাধিক কর্মী তা পাননি। ১৯ এপ্রিল নাগাদ সেগুলি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছেছে। তাতে ওই কর্মীরা ভোটই দিতে পারেননি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণব বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘বেশিরক্ষেত্রেই শাসক বিরোধী সংগঠনের লোকেরা পোস্টাল ব্যালট পাননি। এটা শিলিগুড়ি থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’’

যদি বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোটে ওদের হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। তাই সিপিএম, কংগ্রেস নেতারা এখন নানা যুক্তি খাড়া করছেন। কয়েকদিন আগে তো ওরা প্রশাসন, কমিশনের প্রশংসা করছিলেন, এখন এক্সিট পোলের পর হঠাৎ যেন কেমন কেমন কথা বলছেন!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন