চাঁদা: এমন রসিদেই সোশ্যালের জন্য টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
কলেজের সোশ্যালের নাম করে বাজার থেকে তোলা হচ্ছে চাঁদা। তার জন্য ব্যবসায়ীর হাতে ধরানো হচ্ছে ছাপানো রসিদ। সেই রসিদে জ্বলজ্বল করছে কলেজের নাম। তার নীচে ছোট করে লেখা রয়েছে ছাত্র সংসদ। হাজার টাকার নীচে কারও থেকে চাঁদা নেওয়া হবে না বলে জানিয়েও দিয়েছেন ‘ছাত্র নেতারা’। এমনই অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়ি আনন্দ চন্দ্র (এসি) কলেজে।
কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপির দখলে ছিল। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আর তার ভার দেওয়া হয়েছে সহকারী সাধারণ সম্পাদক গৌরব দে’কে। এ দিকে রসিদ ছাপিয়ে চাঁদা তোলার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অভিজিৎ সিংহ নিজেই জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসিকে ফোন করে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন।
রসিদে আদায়কারী হিসেবেও ছাত্র সংসদের নাম ছাপা রয়েছে। রসিদে ক্রমিক নম্বর, কলেজের ছবি সবই রয়েছে। সোশ্যালের জন্য চাঁদা আদায় করতে নিষেধ করেছে টিএমসিপির রাজ্য নেতৃত্ব। তারপরেও জলপাইগুড়ির কলেজে কেন এমন হল সে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই। কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমার এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই। সোশ্যালের জন্য তো কলেজ তহহিল থেকেই ছাত্র সংসদকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপরে আবার চাঁদার কী প্রয়োজন?” সূত্রের খবর কলেজ তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা সোশ্যালের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার সোশ্যাল রয়েছে। তার জন্য মাঠে মঞ্চ বাঁধার কাজও চলছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, ছাত্র সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দেওয়া হলে, যিনি সংসদের ভারপ্রাপ্ত হন তাঁর সব কাজ করার এক্তিয়ার থাকে না। বিশেষত ছাত্র সংসদের নামে রসিদ ছাপিয়ে টাকা তোলার অধিকার থাকেই না।
চাঁদা তোলা নিয়েও তৃণমূলের মধ্যে টানাপড়েন প্রকাশ্যে এসেছে। ছাত্র সংসদের দায়িত্বে থাকা গৌরব দে চাঁদা তোলার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, এটা কলেজে দীর্ঘ দিনের ‘রীতি।’ সকলেই খুশি মনে চাঁদা দিচ্ছেন বলে দাবি করেন গৌরব। তিনি বলেন, “কাউকে জোর করা হয় না। জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড আসছে। কলেজ যে টাকা দেয় তা দিয়ে বাজেটে কুলোয় না।” এ দিকে জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অভিজিৎ বলেন, “আমি এর কিছুই জানি না। যাঁরা এ কাণ্ড করেছে তাঁরা আর যাই হোক টিএমসিপি নয়। আমি কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করেছি।’’
জেলা সভাপতির বক্তব্য প্রসঙ্গে গৌরবের মন্তব্য, “জেলা সভাপতি হয়ে উনি এমন কথা বললেন কী করে, সেটাই বুঝছি না। ওঁর সঙ্গে কথা বলব।” তৃণমূলের অন্দরে আনন্দ চন্দ্র কলেজের ইউনিটের সকলে জেলার যুব নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। জেলা যুব সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্র রাজনীতিতে যুবরা মাথা ঘামায় না। কী হয়েছে জানিও না। আমরা সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে ধরনা নিয়ে ব্যস্ত।’’