উৎসবের আগে ডাঙ্গরাই মন্দির চত্বরে রং করা হচ্ছে মদনমোহনের রথ। — হিমাংশুরঞ্জন দেব
রাজ পরিবারের কুলদেবতা মদনমোহন দেবের রথযাত্রা উৎসবের বাজেট কমাল দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড। এক ধাক্কায় ৪৫ হাজার টাকা কমে গেল বাজেটের পরিমাণ। এই ঘটনায় কোচবিহারের বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে বাজেট কমানোর বদলে আগেভাগে রথযাত্রার খরচ নিয়ে কেন বিকল্প কিছু ভাবা হয়নি সে প্রশ্নও উঠেছে।
দেবোত্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বোর্ডের আর্থিক অনটনের জেরে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বছর যেখানে রথযাত্রার বাজেট ধরা হয়েছিল ২লক্ষ ৩৪ হাজার ১৭৪ টাকা। এবার সেটাই কমিয়ে করা হয়েছে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩৫৮ টাকা। গত পাঁচ বছরের নিরিখে এটাই সবচেয়ে কম। ফলে এ বার জাঁকজমকের আতিশয্যে কিছুটা কোপ পড়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। দেবোত্তর কর্তৃপক্ষের অবশ্য, বিকল্প আয় বাড়ানোর ব্যাপারে পরিকল্পনা হয়েছে। ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য তথা কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক অরুন্ধতী দে বলেন, “পরম্পরা ও সমস্ত রীতি মেনেই রথযাত্রা উৎসবের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাজেট কিছুটা কমানো হয়েছে।”
দেবোত্তর সূত্রে খবর, ৬ জুলাই রথযাত্রা উৎসবের দিন বিকেলে রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সি অমিয় দেববক্সী প্রথম রথের দড়িতে টান দেবেন। ওই রথে সওয়ার হয়েই ‘বড়বাবা’ (বড় মদনমোহন বিগ্রহ) গুঞ্জবাড়ি মন্দিরে মাসির বাড়ি যাবেন। উল্টো রথের দিন বিগ্রহ ফের মূল মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হবে। এই সময় সিংহাসনে রাখা হবে ‘ছোটবাবা’কে (ছোট মদনমোহন বিগ্রহ)। গুঞ্জবাড়ি চত্বরে ২০ জুলাই পর্যন্ত মেলার আসব বসবে। সেখানে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তবে এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে বাজেট ক্ষোভ।
রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সী অমিয় দেববক্সী বলেন, “এ রকম উৎসবে আগে কখনও বাজেট কমানো হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না। এটা না হলেই ভাল হতো।” কোচবিহারের বাসিন্দা প্রাবন্ধিক দেবব্রত চাকি বলেন, “দেবোত্তরের সঙ্গে জেলার বাসিন্দাদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। পর্যটন দফতরের গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।” কয়েক জন বাসিন্দার বক্তব্য, আগেভাগেই বিকল্প আয়ের ব্যাপারে পরিকল্পনা নেওয়া হলে বাজেট না বাড়ানো গেলেও অন্তত কমাতে হয়তো হতো না। গতবারেরটা রাখা যেত।
মদনমোহন মন্দির-সহ জেলা ও জেলার বাইরে অন্তত ২০টি মন্দির দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের হাতে রয়েছে। সব মিলিয়ে কর্মী আছেন দেড় শতাধিক। তাঁদের বেতন হিসেবে প্রতি মাসে ১৭ লক্ষ টাকা দরকার হয়। পর্যটন দফতর ওই বরাদ্দ ছাড়াও নিত্যপুজো-সহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খরচের বরাদ্দ দেয়। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ওই বরাদ্দ কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ফলে বেশ কয়েক দফায় কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে বেতন পাননি। এক সঙ্গে দু’মাসের বকেয়া বেতন মেটানোর ঘটনাও ঘটেছে। তার জেরে ইতিমধ্যে বোর্ডের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বার গুঞ্জবাড়ি এলাকায় মন্দির সংলগ্ন মাঠ মেলা আয়োজনের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। তাতে আর্থিক আয় হচ্ছে। এ ছাড়াও ফি মাসে ভক্তদের দানে গড়ে এক লক্ষ টাকা জমা হয়। ওই টাকা দিয়েই মূলত বিভিন্ন মন্দিরে নিত্যপুজো আয়োজন করা হচ্ছে।
দেবোত্তরের এক কর্মী জানান, এখনও জুলাইয়ের বরাদ্দ বেতন আসেনি। আগে বছরে তিন দফায় সব টাকা দেওয়া হতো। এ বার সময় মতো বরাদ্দ না এলে ফের বেতন নির্ধারিত দিনে না মেলার আশঙ্কা রয়েছে।
বাজেট কমায় কী কী পরিকল্পনায় কোপ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে? কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, অন্য বারের মতো নবদ্বীপের কীর্তন দলের বদলে স্থানীয় দল নিয়ে রথের সঙ্গে শহর পরিক্রমা করানো, মন্দিরে আলোর বাহার কমানো, গুঞ্জবাড়ি মন্দির সংস্কারের খরচ কমানোর মতো নানা বিষয় ভাবা হয়েছে।