বদল: কেনার পরে পছন্দমতো বদলে নেওয়া হয় বাইক। শিলিগুড়ির একটি গ্যারাজে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
প্রচণ্ড একটা আওয়াজ। দিনভর তা পাওয়া যায় কখনও ইস্টার্ন বাইপাস, কখনও বা এনজেপি-র টি-পার্ক বা সুকনার সুনসান ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক।
রাত বাড়তেই তা আবার ছড়িয়ে পড়ে শিলিগুড়ির বিভিন্ন পাড়ার অলিগলি বা উড়ালপুলের দু’দিকে।
পুলিশের নজর এড়িয়ে তীব্র গতির সঙ্গে কান ফাটানো আওয়াজ নিয়ে কার্যত উড়ে চলে এই আসা-যাওয়া। কখনও মোটরবাইক রেস। কোম্পানির তৈরি সাইলেন্সর পাইপ অনেক ক্ষেত্রেই কেটে নতুন তৈরি করা হয়। যাতে ছোটার সময়ে হয় বিকট শব্দ। এমনই বাইকের বিরুদ্ধে অভিযানে নামল শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশ।
রবিবার দুপুরে মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ে একটি বাইক ধরেন ট্রাফিক পুলিশের অফিসারেরা। কালো রঙের বাইকটির আসল সাইলেন্সর কেটে নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল, যা দিয়ে ক্রমাগত তৈরি হচ্ছিল জোর আওয়াজ। অনেকটা তাড়া করেই বাইকটি ধরেন ট্রাফিকের অফিসার সুরেন্দ্র সিংহ নেগি। ভক্তিনগরের বাসিন্দা ওই যুবককে ১১০০ টাকা জরিমানা করার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সাইলেন্সর বদলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরে সেবক রোড, হিলকার্ট রোড, বর্ধমান রোডে অভিযানও হয়।
ডিসি (ট্রাফিক) সুনীল যাদব বলেন, ‘‘অল্পবয়সী ছেলেদের এখন বাইকে আওয়াজ করা ফ্যাশন। গ্যারাজে সাইলেন্সর কেটে তৈরি করানো হচ্ছে। বিপজ্জনকও বটে। আমরা গ্যারাজগুলিতেও অভিযান করব। জরিমানার সঙ্গে এর পর থেকে অভিভাবকদের ডাকা হবে।’’
ট্রাফিক পুলিশের অফিসারেরা জানান, বাইক চালকের বয়স মেরে কেটে ১৮-২৫ বছর। আরোহী কখনও কখনও তরুণীরাও। মূল সাইলেন্সর পাইপটির ৯০ শতাংশ কেটে ফেলা হয়। তার পরে লোহার ক্লিপ দিয়ে ঝালাই করে মোটা ও সরু আকৃতি মিলিয়ে ছোট একটি সাইলেন্সর লাগানো হয়।
১-২ হাজার টাকা খরচ করলেই তৈরি হয় বুলেটের মতো আওয়াজ। আবার কিছু ক্ষেত্রে সিট কেটে উঁচু করা বা হ্যান্ডেল কেটে ছোট করার ঘটনাও চলছে। বাইক রেস তো বটেই, বন্ধু-বান্ধবী মহলে লেটেস্ট ট্রেন্ড নিয়ে বাহবা পেতেই এই ব্যবস্থা।
সাধারণ মানুষও তার প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি প্রধাননগরের কয়েকজন বাসিন্দা ক্ষোভ জানান এলাকারই একটি ছেলের বিরুদ্ধে। সে এমন ভাবেই বাইক চালাতো। তার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে বলে জানান ডিসি ট্র্যাফিক সুনীল যাদব।
রাতের পাড়ার গলিতে এমন আওয়াজ শুনে বুক ধড়ফড় করে ওঠে বলে জানিয়েছেন খোদ শহরের মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘‘কী ভয়ানক! যেমন গতি, তেমন আওয়াজ। সামনে পড়লে তো চাপা দিয়ে দেবে মনে হয়।’’ এখনই পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয় না হলেও সমস্যা বাড়বেই বলে জানিয়েছেন বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক রতন বণিক। তিনি বলেন, ‘‘রাতে আওয়াজে চারদিকে কেঁপে ওঠে। বিপজ্জনক হওয়ায় সাইলেন্সর ফেটেও যেতে পারে। পুলিশকে আরও কড়া হতে হবে।’’