ছিঃ! কান ধরে ওঠবোস করানো হল বালুরঘাটের যুবককে। —নিজস্ব চিত্র।
দু’দিন আগেই কাশ্মীরে হামলা নিয়ে কোচবিহারের এক যুবক মন্তব্য করায় তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছিল। এ বার সেই একই কাণ্ড হল বালুরঘাটেও। মঙ্গলবার দুপুরে বালুরঘাট শহরের কলেজমোড় এলাকার ঘটনা। শহরের উত্তর চকভবানী এলাকার বাসিন্দা বছর পঁচিশের ওই যুবকের বিরুদ্ধে ‘দেশবিরোধী’ পোস্টের অভিযোগে কান ধরে ওঠবোস করানো হল। চারদিকে ঘিরে থাকা জনতার দাবি মেনে ওই যুবককে নিলডাউন হয়ে বলতে হল, ‘‘জয় হিন্দ, ভারতমাতা কি জয়।’’ তাঁকে চড় থাপ্পরও মারার অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘটনাটি বড় আকার ধারণ করার আগে বালুরঘাট থানার পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে আনে। সেই যুবক বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে তারপরে অভিযুক্তরা ক্ষমা চেয়ে নেন।
কিন্তু তাতে শহরের উদ্বেগ কাটেনি। কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী ওই যুবক দিন কয়েক আগে ছুটিতে বালুরঘাটের বাড়িতে আসেন।
তাঁর বিরুদ্ধে কাশ্মীরে জঙ্গি হানার ঘটনায় ফেসবুকে ‘দেশবিরোধী’ মন্তব্যের অভিযোগ তুলে সরব হন এলাকার কিছু যুবক। এ দিন তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে একদল যুবক কলেজ মোড়ে সকলের সামনে কানধরে ওঠবোস করানোর পর দীর্ঘ ক্ষণ ‘নিল ডাউন’ করে রাখা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার জেরে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচলতি মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বালুরঘাট থানা থেকে মাত্র প্রায় ১০০ মিটারের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটতে থাকলে সিভিক ভলান্টিয়ারের কাছ থেকে খবর পেয়ে বালুরঘাট থানার আইসি ছুটে যান। পুলিশের হস্তক্ষেপে উত্তেজনা কমে।
এ দিন থানায় বসে নিগৃহীত যুবক দাবি করেন, হামলাকারীদের কয়েক জন তাঁর পরিচিত। কাশ্মীরের ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে পোস্টের বিষয়ে ভুল বুঝে এ দিন ওরা তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করেন বলে অভিযোগ। ওই যুবক বলেন, সোমবার ওই পোস্টের বিষয় নিয়ে ওই যুবকেরা জানতে চাইলে আলোচনা হয়। ফেসবুকের ওই পোস্ট তাঁদের দেখিয়ে জানানো হয় দেশবিরোধী কোনও মন্তব্য করা হয়নি। ওরা ভুল বুঝে অভিযোগ তুলেছে জানিয়ে তখনকার মতো মিটমাট হয়ে যায়। কিন্তু এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ফোন করে তাঁকে কলেজ মোড়ে ডেকে এনে চড়থাপ্পর দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে বলে ওই যুবকের অভিযোগ। এলাকার কয়েকজন দাবি করেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরে জঙ্গি হানা নিয়ে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করে পরে সেই পোস্ট ওই যুবক পোস্টটি মুছে ফেলেন। তাতেই ক্ষোভ ছড়ায়।
এক অভিযুক্তর কথায়, বেসরকারি সংস্থার কর্মী ওই যুবককে মারধর করা হয়নি। বালুরঘাট থানার আইসি বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত করছে।’’
পুলিশ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ও কোচবিহারের ঘটনাতেও তদন্ত শুরু করেছে।