দু’মাস ধরে দেরিতে চলছে রাধিকাপুর প্যাসেঞ্জার, ক্ষোভ

গত প্রায় দু’মাস ধরে রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেন দেরিতে চলায় ক্ষুব্ধ রায়গঞ্জ মহকুমার যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিদিনই প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা করে দেরিতে ট্রেনটি চলছে। গভীর রাতে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও রাধিকাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছচ্ছে। ফলে গভীর রাতে যাত্রীরা বিভিন্ন স্টেশনে নেমে নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। সেইসময় স্টেশনে নেমে রিকশা ও ট্যাক্সি না পেয়ে যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫২
Share:

গত প্রায় দু’মাস ধরে রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেন দেরিতে চলায় ক্ষুব্ধ রায়গঞ্জ মহকুমার যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিদিনই প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা করে দেরিতে ট্রেনটি চলছে। গভীর রাতে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও রাধিকাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছচ্ছে। ফলে গভীর রাতে যাত্রীরা বিভিন্ন স্টেশনে নেমে নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। সেইসময় স্টেশনে নেমে রিকশা ও ট্যাক্সি না পেয়ে যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন।

Advertisement

সম্প্রতি রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম ও বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে ট্রেনটিকে সঠিক সময়ে চালানোর দাবি জানিয়েছেন। অবিলম্বে ট্রেনটি সঠিক সময়ে চলাচল না করলে যাত্রীদের নিয়ে পৃথকভাবে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল।

রায়গঞ্জ স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট জয়ন্ত চন্দ বলেন, “প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যায় রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি দেরিতে চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে শীঘ্রই সমস্যা মিটবে।

Advertisement

কী সেই প্রযুক্তিগত সমস্যা?

রেল সূত্রের খবর, বারসই থেকে নিউ জলপাইগুড়ি লাইনে দিনভর একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করে। তাই রেল কর্তৃপক্ষ সিগন্যাল না দেওয়ায় যাতায়াতের পথে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্টেশনে রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়।

রায়গঞ্জ মহকুমার সঙ্গে শিলিগুড়ির রেল যোগাযোগ গড়ে তুলতে ২০১১ সালের রেল বাজেটে তত্‌কালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালুর কথা ঘোষণা করেন। সেইমতো ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ওই ট্রেনের যাত্রা শুরুর উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রেল সূত্রের খবর, রাধিকাপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল সওয়া ৬টায় ছেড়ে ট্রেনটি বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছনোর কথা। অন্য দিকে, প্রতিদিন বিকেল ৪টে ৪০মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছেড়ে রাত ১০টা ৫০মিনিটে রাধিকাপুর স্টেশনে পৌঁছনোর নির্ধারিত সময় রয়েছে। যাতায়াতের পথে ট্রেনটি ডালিমগাঁও, কালিয়াগঞ্জ, বাঙালবাড়ি, বামনগাঁও হল্ট, রায়গঞ্জ, ঝিটকিয়া হল্ট, কাচনা, ধাঁচনা, বারসই, কিসানগঞ্জ, আলুয়াবাড়ি রোড, পোথিয়া, ভাইরাদপুর, ঠাকুরগঞ্জ, পিপরিথানহল্ট, গলগলিয়া, অধিকারী, বাতাসিহল্ট, নকশালবাড়ি, বাগডোগড়া, মাটিগাড়াহল্ট, শিলিগুড়ি জংশন ও শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে স্টপ দিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি ও রাধিকাপুর স্টেশনে পৌঁছয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, এক মাস ধরে প্রতিদিনই ট্রেনটি সকাল ৬টার পরিবর্তে সকাল ৯টা থেকে ১০টার আগে ছাড়ছে না। ফলে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে ছাড়লেও সেটিকে বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখায় রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও রাধিকাপুর এসে রাত ১২টা থেকে ২টা বেজে যাচ্ছে।

রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, “দুমাস ধরে রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি দেরিতে চলায় যাত্রীরা গভীর রাতে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ ও রাধিকাপুর স্টেশনে নেমে নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। গভীর রাতে স্টেশন চত্বরে পর্যাপ্ত রিকশা ও ট্যাক্সি না পেয়ে যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। যাত্রীদের সমস্যার কথা জানিয়ে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সঠিক সময়ে ট্রেনটি চালানোর দাবি জানিয়েছি।

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে মাঝেমধ্যেই যানজট থাকে। তাই রায়গঞ্জ মহকুমার যাত্রীদের সঠিক সময়ে শিলিগুড়ি যেতে প্রধান ভরসা রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। তিনি বলেন, “দু’মাস ধরে ট্রেনটি অস্বাভাবিক দেরিতে চলায় যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। যাত্রীরা আমাদের অভিযোগ জানানোয় দলের তরফে দু’সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সঠিক সময়ে ট্রেনটি চালানোর দাবি জানানো হয়েছে।”

জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত ও জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ট্রেনটি যাতে সঠিক সময়ে চলাচল করে, তার জন্য যাত্রীরা তাঁদের কাছেও দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, দলের তরফে রেল কর্তৃপক্ষের বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও ট্রেনটি সঠিক সময়ে চালানো হচ্ছে না। অবিলম্বে রেল কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে ট্রেনটি চালানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ না করলে যাত্রীদের নিয়ে আন্দোলনে নামা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন