দারুমূর্তিকে মাখান হয় ঘি, মধু

পঁয়ত্রিশ বছর যাবৎ রথযাত্রার আয়োজন করে আসছে দিনহাটার শ্রীগুরুপ্রসন্ন আশ্রম। এখানে রথযাত্রার আনুষ্ঠানটি হয় যথাবিহিত নিয়মে। পঞ্জিকা মেনে ‘স্নানযাত্রার’ দিন সংকীর্তন-সহ শহর অতিক্রম করে ফুলের মালা, আম্রপল্লব শোভিত কলসি করে জল নিয়ে আসা হয় স্থানীয় দিঘি থেকে। নাটমন্দিরের স্নানবেদিতে বসানো হয় জগন্নাথ দেবকে।

Advertisement

অনিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০২:২৪
Share:

পঁয়ত্রিশ বছর যাবৎ রথযাত্রার আয়োজন করে আসছে দিনহাটার শ্রীগুরুপ্রসন্ন আশ্রম। এখানে রথযাত্রার আনুষ্ঠানটি হয় যথাবিহিত নিয়মে। পঞ্জিকা মেনে ‘স্নানযাত্রার’ দিন সংকীর্তন-সহ শহর অতিক্রম করে ফুলের মালা, আম্রপল্লব শোভিত কলসি করে জল নিয়ে আসা হয় স্থানীয় দিঘি থেকে। নাটমন্দিরের স্নানবেদিতে বসানো হয় জগন্নাথ দেবকে। দারুমূর্তিতে মাখানো হয় ঘি, মধু, দধি, দুগ্ধ। তারপর কলসির জল ও ভক্তদের আনীত ঘটের জল-সহ ১০৮ কলসি জল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথকে। বিশেষ পুজোপাঠের পর বন্ধ হয়ে যায় জগন্নাথ দর্শন। এই এক পক্ষকাল সময়টিকে বলা হয় ‘অনবসর চাল’। ঘড়া ঘড়া জলে স্নান করানোর ফলে তার জ্বর আসে। এই সময় বিভিন্ন ধরনের পাঁচন, সুক্তো, মিষ্টি নিবেদন করা হয়। এই সময়কালেই মন্দিরের সেবকেরা অলক্ষে দারুমূর্তিতে রং করে ‘অঙ্গরাগ’ করে থাকেন। রথযাত্রার আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় ‘গুন্ডিতামন্দির মার্জন শীল’ পক্ষকাল ধরে ভক্তদের সামনে দর্শন দেন জগন্নাথ তাই একে মত্রোৎসব-ও বলা হয়ে থাকে। পর দিন রথযাত্রা উপলক্ষে বিশেষ পুজোপাঠের পর বিকেলে নয়টি চূড়াবিশিষ্ট কাঠের রথে আরোহণ করেন জগন্নাথ। নামসংকীর্তন বাদ্যবাজনা-সহ ভক্তদের রথের রশির টানে শহর পরিক্রমা করেন মহাপ্রভু জগন্নাথ। দিনহাটার মহামায়া পাঠের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের রথযাত্রা এ বার দশ বছরে পড়ল। রথটি দান করেন স্নধ্যারানি পাল। রাধাগোবিন্দ মন্দির থেকে শুরু করে দিনহাটা শহর পরিক্রমার পর জগন্নাথ রেলস্টেশন সংলগ্ন রাধাকালাচাঁদ মন্দিরে মাসির বাড়িতে থাকেন, সেখান থেকে শুরু হয় উল্টোরথ যাত্রা।

Advertisement

হলদিবাড়িতে প্রায় বছর চুয়াল্লিশ আগে বাংলার ১৩৭৯ সালে হলদিবাড়িবাসী বণিক সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে একটি কমিটি গঠন করে। সিদ্ধান্ত হয় হলদিবাড়ির জনৈক হরিদাস বণিকের গৃহদেবতা রাধাকৃষ্ণ ও গোপাল সারথী-সহ রথাযাত্রার আয়োজন করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বু্দ্ধপূর্ণিমা তিথিতে ‘পুষ্পরথ’ নামে রথযাত্রা শুরু হয়। পরের বছর হলদিবাড়ির পক্ষে রথ নামে আষাঢ় মাসে জগন্নাথদেবের রথ যাত্রার দিন। আজও হরিদাস বণিকের বাড়ি থেকেই রথটি বের হয় এবং হলদিবাড়ি পরিক্রম করে স্থায়ী দয়াময় বণিকের বাড়িতে সাত দিন অবস্থান করে। এই রথযাত্রার জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানুষ অংশগ্রহণ করেন ও রথের রশিতে হাত লাগান। পাশাপাশি এ বছর ৫১-ত পা দেবে হলদিবাড়ির বালাভাণ্ডার শিমূলতলার রথযাত্রা। সূচনা হয় বাংলার ১৩৭২ সালে। দুলালচন্দ্র সরকারের উদ্যোগে।। পরবর্তী কালে তাঁর পুত্ররা এই রথযাত্রাটি পরিচালনা করে আসছিল। প্রধান আকর্ষণ জিলিপি।

শলাবাজারের নেতাজি কলোনির স্বর্গীয় দিনেশচন্দ্র সূত্রধরের উদ্যোগে পারিবারিক রথযাত্রার সূচনা হয় ১৯৮৩-তে। পরিবারের উত্তরসূরি রামগোপাল সূত্রধর জানালেন, বর্তমানে এই রথযাত্রার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে শল পুরসভা। প্রায় ২৫ ফুট উঁচু কাঠের রথটির সামনে রয়েছে দুটে কাঠের ঘোড়া ও দণ্ডায়মান সারথি। রথকে কেন্দ্র করে মেলাটি বসে স্থানীয় আর আর স্কুল ময়দানে। রাঙামাটি, শলারকাঁটা, নিদান মেটেলি নিউ গ্ল্যাসকো চা বাগানের শ্রমিক কর্মচারীরা মেলা দেখতে যান।

Advertisement

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন