ডোন্ট টাচ মি, ঝঙ্কার তরুণীর

টলমল পায়ে ফুটপাথ বদল হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকবার। একবার তো মাঝ রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়েই গেলেন জিনস-টপ পরা তরুণী। ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে এগারোটা ছুঁয়ে ফেলেছে, সুনসান হতে শুরু করেছে হিলকার্ট রোড। সাহায্যের জন্য এক যুবককে এগিয়ে আসতে দেখে, রাস্তায় বসেই ওই তরণী ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ‘‘ডোন্ট টাচ মি। আমি পুলিশ ডাকব।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

টলমল পায়ে ফুটপাথ বদল হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকবার। একবার তো মাঝ রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়েই গেলেন জিনস-টপ পরা তরুণী। ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে এগারোটা ছুঁয়ে ফেলেছে, সুনসান হতে শুরু করেছে হিলকার্ট রোড। সাহায্যের জন্য এক যুবককে এগিয়ে আসতে দেখে, রাস্তায় বসেই ওই তরণী ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ‘‘ডোন্ট টাচ মি। আমি পুলিশ ডাকব।’’

Advertisement

তরুণীকে অবশ্য পুলিশ ডাকতে হয়নি। রাস্তায় উপস্থিত কয়েক জনই পুলিশে ফোন করেছিলেন। পুলিশ ভ্যান দেখে হাত-পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ান তরুণী। কিন্তু পুলিশ কর্মীরা তরুণীকে ভ্যানে ওঠার অনুরোধ করতেই বছর চব্বিশের তরুণীর প্রশ্ন, ‘‘মহিলা পুলিশ কোথায়?’’ তারপরেই পুলিশকে লক্ষ করে তেড়ে আসে চার-পাঁচ অক্ষরের গালিগালাজ। তরুণী কণ্ঠে গালিগালাজ শুনে কয়েক হাত পিছিয়ে যান পুলিশ কর্মীরা। আশপাশের উৎসুক পথচারীরাও নিরাপদ দূরত্বে সরে দাঁড়ান। তারপরেই শুরু হয় তরুণীর ‘মর্দানি।’ রাত সাড়ে এগারোটা থেকে প্রায় চল্লিশ মিনিট শিলিগুড়ির হাসমিচক এলাকার হিলকার্ট রোড হয়ে ওঠে তরুণীর ‘মুক্তাঞ্চল’।

গত অক্টোবর মাসের এক গভীর রাতে কলকাতার নিউ আলিপুর থানায় এক পুলিশ কনস্টেবলকে কামড়ে দিয়েছিলেন এক মহিলা। মারধর করে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন ওই মহিলা। গত মঙ্গলবার রাতে হিলকার্ট রোডের ওই তরুণী অবশ্য কাউকে আঁচড়ে-কামড়ে দেননি। তিনি রাস্তার মাঝামাঝি থাকা ‘গার্ড রেল’গুলিকে টেনে রাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে রেখে দেন। বন্ধ হয়ে যায় যায় হিলকার্ট রোডের যান চলাচল। পুলিশ গার্ড রেল সরাতে গেলেই তরুণী তেড়ে যায়। গভীর রাতে এক তরুণীর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়লে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে এই আশঙ্কা পুলিশ কর্মীরাও বাধা দেন। এদিকে রাতের বেলায় তরুণীকে রাস্তায় ফেলে চলে গেলেও, বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। অগত্যা তরুণীকে নজরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন পুলিশকর্মীরা। শিলিগুড়ি থানায় মহিলা কনস্টেবল চেয়ে খবর পাঠানো হয়। যদিও, মহিলা কনস্টেবল পৌঁছতেই আধ ঘণ্টা লেগে যায় বলে অভিযোগ। তত ক্ষণ তরুণীকে সামলাতে নাকানিচোবানি খেতে হয় উর্দিধারীদের।

Advertisement

কখনও রাস্তায় দু’হাত ছড়িয়ে বসে পড়েছেন তরুণী, কখনও বাঁ পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বাইকের পিছনে তাড়া করেছেন, একবার ডিভাইডারে থাকা বাতিস্তম্ভ জড়িয়ে ছবি তোলার মতো ‘পোজ’ও দিয়েছেন। যদিও কেন তিনি এমন আচরণ করছেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয় পুলিশ কর্মীদের কাছে। কেন তিনি হিলকার্ট রোড বন্ধ করে দিতে চাইছেন, তা জানতে চাইলে তরুণী উত্তর দিয়েছেন, ‘‘তোর তাতে কী?’’

প্রায় চল্লিশ মিনিট চলার পরে মহিলা কন্সটেবল এসে তরুণীকে জোর করে থানায় নিয়ে যায়। রাতভর মহিলা সেলেই রাখা হয় তাঁকে। বুধবার তরুণী বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা, বেলেল্লাপানার অভিযোগ দায়ের করে শিলিগুড়ি আদালতে পাঠানো হয়। একশো টাকা জরিমানা করে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে তরুণীর বাড়ি মালদহে। শিলিগুড়ি লাগোয়া একটি এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে তিনি ঘুরতে এসেছিলেন বলে পুলিশকে জানান। এ দিন সকালে আদালতের হাজতের সামনে নিয়ে গেলে সেখানেও অন্য বন্দিদের ওই তরুণী ধমকে দেন বলে অভিযোগ।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বার্মা বলেন, ‘‘বিষয়টি বিস্তারিত জানি না। খোঁজ নেব।’’ যদিও, শিলিগুড়ির থানার এক পুলিশ কর্মীর কথায়, ‘‘তরুণীকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে।’’

হাসমিচকে আধঘণ্টা ‘তাণ্ডব’ চালানোর পরে ওই তরুণী সেবক রোডের দিকে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। তখন রাত প্রায় বারোটা। তখনও মহিলা পুলিশ এসে পৌঁছননি। তবে পুলিশকর্মীরা তরুণীকে চোখের আড়াল করেননি। রাতের রাস্তা ধরে টলমল পায়ে এক তরুণী এগিয়ে চলছেন, তার পিছু পিছু ধীর গতিতে এগোলো পুলিশ ভ্যানও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন