পুরনো বিহার ফিরে পেতে সংস্কার

ইতিমধ্যে হবিবপুরের ওই  বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই নবরূপে সেজে উঠবে পাল আমলের বৌদ্ধবিহার।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩১
Share:

ব্যস্ততা: কাজ চলছে জগজীবনপুরে। নিজস্ব চিত্র

অবশেষে সংস্কার শুরু হল মালদহের জগজ্জীবনপুরের বৌদ্ধবিহারের। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বৌদ্ধ বিহারকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

ইতিমধ্যে হবিবপুরের ওই বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই নবরূপে সেজে উঠবে পাল আমলের বৌদ্ধবিহার। তবে পর্যটন মরসুম শুরু হওয়ার আগে প্রশাসন সংস্কারে উদ্যোগী হলে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়ত বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

টাকা পড়ে থাকলেও কেন কাজ শুরু হতে বছর তিনেক গড়াল? মালদহের পরিকল্পনা উন্নয়ন আধিকারিক সুমন পোদ্দার বলেন, “পুরাতত্ত্ব বিভাগের ছাড়পত্র না মেলায় ঠিক সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। তবে এখন সমস্যা মিটে গিয়েছে। জোরকদমে বৌদ্ধবিহার সংস্কারের কাজ চলছে। নতুন ভাবে সেজে উঠতে চলেছে বৌদ্ধবিহারটি।”

Advertisement

মালদহ শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে হবিবপুর ব্লকের কেন্দপুকুর স্ট্যান্ড। সেখান থেকে গ্রামের লালমাটি রাস্তা ধরে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যেতে হয় জগজ্জীবনপুরে। ওই গ্রামেই রয়েছে সেই প্রাচীন নিদর্শন। যার টানে সারা বছরই মানুষের ভিড় থাকে। ওই গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর জগদীশ গাইন ১৯৯০ সালে নিজের বাড়ি তৈরির জন্য মাটি খুঁড়ছিলেন। তখনই তিনি একটি তাম্রপত্র পান। সেই তাম্রপত্রটি তুলে দেন ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাম্রপত্রটিতে পালি ভাষায় ৭০ লাইন লেখা ছিল। সেখান থেকেই জানা যায় পাল যুগে মহেন্দ্রদেব পাল নামে এক রাজা ছিলেন। যাঁর নাম তার আগে জানা ছিল না।

সেই মহেন্দ্রদেব পাল বৌদ্ধদের উপাসনার জন্য ওই জমিটি দিয়েছিলেন। সে কথা ওই তাম্রপত্রে উল্লেখ করা রয়েছে। তারপর থেকেই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় খনন কাজ। ২০০৫ সাল পর্যন্ত মাটি খননের পর একটি বাড়ির ভগ্নাবশেষ পাওয়া যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদদের কথায়, ‘‘বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা করতেন। আর ভবনটি দ্বিতল ছিল। সেই সময় বৌদ্ধদের তুলসী ভিটে, চারটি নজরদারি মিনার, শৌচাগার সবই ছিল। সেই ভগ্নাবশেষের অংশ রয়েছে। তারপর থেকেই পর্যটক এবং ইতিহাস পিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে জগজ্জীবনপুর।’’

গত, ২০১৫ সালে রাজ্যের পর্যটন দফতর জগজ্জীবনপুরের বৌদ্ধবিহারটিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়। তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ২কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। তবে টাকা পড়ে থাকলেও কাজ শুরু হয়নি। ফলে প্রশাসনের ভুমিকায় ক্ষোভ উগড়ে দিতেন পর্যটকেরা। ঝোপ জঙ্গল, আগাছায় ঢেকে গিয়েছিল বৌদ্ধবিহারটি। এ ছাড়া বৌদ্ধবিহারকে ঘিরে ছোট একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছিল। সেখানে মাটি খননের সময় উদ্ধার হওয়া প্রাচীন নিদর্শনগুলো সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। তবে সংস্কারের অভাবে সেটিও বেহাল হয়ে পড়েছিল। যদিও অবশ্য এখন টনক নড়েছে প্রশাসনের কর্তাদের। প্রশাসনের উদ্যোগে ইতিমধ্যে ঝোপ জঙ্গল সাফাই করার কাজ হয়েছে। জানা গিয়েছে, সেথানে প্রশাসনিক ভবন, বিশ্রামাগার, শৌচাগার নতুন করে তৈরি হবে।

স্থাপন করা হবে বিশাল একটি বৌদ্ধ মূর্তি। এ ছাড়া সাজানো হবে সংগ্রহশালাও। জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “বৌদ্ধ বিহারটিকে দ্রুত সাজানোর কাজ চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন