সকলেই তৃণমূল করেন। মালদহে দলের জন্মলগ্ন থেকে যে যখন দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত কার্যালয়ই তখন জেলা পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। আক্ষরিক অর্থে এই জেলায় দলের স্থায়ী কোনও পার্টি অফিস এখনও গড়েই ওঠেনি।
মোয়াজ্জেম হোসেন জেলা সভাপতি হওয়ার পর তিনি ইংরেজবাজার শহরের সুকান্ত মোড়ের কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে পার্টি অফিস করেছেন। যা এখন দলের জেলা কার্যালয় বলে পরিচিত। কিন্তু বাস্তবে জেলার অনেক তাবড় তাবড় নেতা-নেত্রীর সেখানে পা মাড়ান না। নেতা-নেত্রীরা নিজেদের ব্যক্তিগত অফিস থেকেই দলের কাজ করেন। গত এক বছরে দলের কোর কমিটির বৈঠক কোনও সময়ই জেলা কার্যালয়ে হতে দেখা যায়নি। কখনও তা হয়েছে কোনও অডিয়োরিয়াম ভাড়া নিয়ে বা কখনও হোটেলে. এটাই যেন মালদহে তৃণমূলের দস্তুর হয়ে উঠেছে।
নয়া জেলা কমিটি গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি মালদহের দলীয় নেতা-নেত্রীদের এহেন দ্বন্দ্ব ও ইগো মেটাতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার সেই নেতা-নেত্রীদের ব্যক্তিগত পার্টি অফিস গুলিতেই পালা করে দলের জেলা কমিটির সভা করার দাওয়াই বাতলে গিয়েছেন। প্রতি শুক্রবার করে এক একটি অফিসে সেই সভা হবে। দলেই প্রশ্ন উঠেছে, একেবারে বিপরীত মেরুতে চলা নেতা-নেত্রীরা এবার কি অন্তত এক হবেন! এ নিয়ে জেলার রাজনীতিতে জোর চর্চাও চলছে। নিচুতলার কর্মীদের কিন্তু আশা, নেত্রীর এমন দাওয়াইয়ে এ বার নেতা-নেত্রীদের দ্বন্দ্ব ও ইগো যদি মেটে।
মালদহে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব কারও অজানা নয়। গত বিধানসভা ভোটের আগে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার নিয়েছিল। যা নিয়ে শেষ পর্যন্ত দলনেত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। পরে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো নিয়ে দুলাল সরকার ও নীহাররঞ্জন ঘোষের সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবুর দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া দল পরিচালনা নিয়েও নেতা-নেত্রীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
সে কারণেই নেত্রীর নির্দেশে অনেকেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন। নেত্রীর নির্দেশ পালন না করলে ফল বিপরীত হবে জেনে সকলকেই শেষ পর্যন্ত ঢোক গিলতে হচ্ছে। নেত্রীর নির্দেশ নিয়ে কোনও নেতা-নেত্রীই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিষয়টি যে তাঁদের অস্বস্তি বাড়িয়েছে, সেটা ঠারে ঠারে বুঝিয়েছেন। দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশ অনুয়ায়ীই আগামী শুক্রবার থেকে বৈঠকগুলি করা হবে।’’ দলের এক নেতা অবশ্য বলেন, নেত্রীর নির্দেশে মিটিংয়ে হয়তো সকলেই করবেন। বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে তা সময়ই বলবে।