পুল নয়। কোচবিহারে গভীর সাগরদিঘিতে কোনও নিরাপত্তা ছাড়া এ ভাবেই চলছে সাঁতার ক্লাস। (ডান দিকে) মালদহ শহরের একটি সুইমিং পুলে। — নিজস্ব চিত্র
মালদহ
এই জেলায় একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি রয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে। কলকাতার ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা। ওই খবর জানার পর দিনই দেখা যায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিভাবকদের ভিড়। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দুটি সুইমিং পুল রয়েছে। একটি শিক্ষার্থীদের জন্য। ওই পুলটি দশ মিটার চওড়া এবং পাঁচ মিটার লম্বা। গভীরতা তিন ফুট। আর বড়ো পুলটির গভীরতা সাত ফুট। চওড়া ২০ মিটার এবং লম্বায় ১৫ মিটার। এখানে মোট ৫০০ জন শিক্ষার্থী সাঁতার শেখে। তিন বছর বয়স হলেই এখানে সাঁতার শেখাতে পাঠাতে পারেন অভিভাবকেরা। মোট ১৬ জন প্রশিক্ষক রয়েছেন। তার মধ্যে সাত জন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে তাকে কী ভাবে উদ্ধার করা হবে, সেই বিষয়ে কলকাতা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাঁরা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার দাবি, এঁরা আছেন, শিক্ষার্থীদের পুলে গভীরতা কম— এ সব কারণেই এখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক কম। সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সম্পাদক দেবব্রত সাহা বলেন, প্রশিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকেরাও নজর রাখতে পারেন ছেলেমেয়েদের উপরে।
রায়গঞ্জ
২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় সরকারি সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সময়ে ডুবে মারা যায় শহরের মিলনপাড়ার বাসিন্দা অমিক সাহা (১৬)। একাদশ শ্রেণির এই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় হইচই পড়ে যায় রায়গঞ্জ জুড়ে। সুইমিং পুলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আরও নিশ্ছিদ্র করা হয়। উত্তর দিনাজপুর জেলা উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের অধীনে থাকা ওই পুলটি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খোলা থাকে। ওই পুলে চার জন প্রশিক্ষক রয়েছেন। ভোর পাঁচটায় এখানে দরজা খোলে। বন্ধ হয় সন্ধ্যা সাতটার পরে। ওই পুলে দীর্ঘদিন ধরে সাঁতার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন রায়গঞ্জের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য দুর্গেশ ঘোষ। তিনি বলেন, সুইমিং পুলে দুর্ঘটনার পর প্রশাসন নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। প্রশিক্ষকদের কড়া নজরদারিতে সবাই সাঁতার প্রশিক্ষণ নেন। আচমকা কেউ জলে ডুবে গেলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধারের ব্যবস্থা রয়েছে। দ্রুত তাঁকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলাশাসক রণধীর কুমার বলেন, সুইমিং পুলে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, সে দিকে প্রশাসন সবসময় সতর্ক রয়েছে। দুর্ঘটনা রুখতে সেখানে সব রকম পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে।
শিলিগুড়ি
এই শহরে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম লাগোয়া বিকাশ ঘোষ মেমোরিয়াল সুইমিং পুলে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। লিজে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি সংস্থাকে। কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের এখানে নতুনদের প্রশিক্ষণের সময় বিশেষ নজর দেওয়া হয়। অন্যতম কর্ণধার জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নতুনরা যে জলে নামেন, তার গভীরতা চার ফুট। ফলে ডুবে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। ২৫ মিটার লম্বা সেই পুলে থাকেন তিন জন ট্রেনার। এ ছাড়াও এক জন পুলের উপর থেকে সার্বিক ভাবে নজর রাখেন। কী ভাবে চিনবেন নতুনদের, তারও ব্যবস্থা করে রেখেছে সংস্থা। শিক্ষার্থীদের জন্য লাল টুপি বাধ্যতামূলক। প্রতি ব্যাচে নতুন-পুরনো মিলে গড়ে ২০ জন থাকেন। পুরনোদের জন্য পুলে গভীরতা ছয় ফুট। তাই সাঁতার না শিখে সেই পুলে নামার অনুমতি মেলে না। শেখার সময় অভিভাবকদের থাকতে দেওয়া হয় না। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চাইলে প্রথম কিছু দিন বাড়ির লোকেদের থাকতে দেওয়া হয়।
জলপাইগুড়ি
জলপাইগুড়ি পুরসভা ২০০৯ সালে শহরের মুহুরিপাড়া এবং নিউ সার্কুলার রোডের সংযোগস্থলে ইন্দিরা গাঁধী সিনিয়র সিটিজেন পার্ক সংলগ্ন এলাকায় একটি সুইমিং পুল তৈরি করে। দু’বছর আগে পুলটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি স্থানীয় ক্লাবের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই পুলে সাঁতার শিখতে এবং কাটতে আসেন সব বয়সের নারী-পুরুষ। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, সকলের জন্য দরজা খোলা। এবং সকলের জন্য আলাদা সময়ে সাঁতারের ব্যবস্থা রয়েছে। ২৫ মিটার লম্বা এই পুলে বাচ্চাদের বেলায় প্রতি ব্যাচে ৪০ জন, বড়দের বেলায় প্রতি ব্যাচে ৩০ জন সাঁতার কাটে। ক্লাব কর্তৃপক্ষের দাবি, সাঁতারের সময় যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সব রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থাই নেওয়া হয়।
কোচবিহার
এই জেলায় একটিই মাত্র সুইমিং পুল রয়েছে। সেটি তুফানগঞ্জ শহরের দরিয়াবালাই রোডে। তবে সাগরদিঘিতেও সাঁতার শেখানো হয়। কিন্তু সুইমিং পুলের কোনও সাবধানতাই এখানে অবলম্বন করা হয় না। সে জন্য এই নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সাগরদিঘি বড় জলাশয়। তাঁর গভীরতাও অনেক বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই সাঁতার শেখাতে গিয়ে কোনও বড় দুর্ঘটনার ঘটনা যে কোনও সময় ঘটতে পারে। তা ছাড়া, এখানে কোনও লাইফ জ্যাকেটও ব্যবহার করা হয় না। প্রশিক্ষকদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের অনেকেই অভিযোগ করেন, এত বড় জেলা শহর হলেও এখানে একটি সুইমিং পুল তৈরি করা হয়নি। অথচ শিশুদের সাঁতার শেখাতে আগ্রহী, এমন অভিভাবকের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এর আগে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সাঁতার শেখানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সুইমিং পুলের ব্যবস্থা করা হয়নি। পরে ফের তা চালু হয়। সাগরদিঘিতে সাঁতার শেখান জ্যোতিবিকাশ সূত্রধর। তিনি বলেন, “ভাবতেও খুব খারাপ লাগে আমাদের শহরে একটি সুইমিং পুল নেই। সম্পূর্ণ নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে আমরা বাচ্চাদের সাঁতার শেখাই। ঘাটের কাছেই তাদের রাখতে হয় বেশির ভাগ সময়।” তিনি জানান, সাগরদিঘির ঘাটে একসঙ্গে প্রায় তিরিশ জনকে সাঁতার শেখানো হয়। সেখানে নতুন ও পুরনোরা থাকে। পাঁচ জন প্রশিক্ষক থাকেন একটি করে ঘাটে। অভিভাবকদের সামনেই সাঁতার শেখানো হয়। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই বিষয়ে তাঁরা নজর রেখেছেন।
তুফানগঞ্জ সুইমিং পুল কমিটির পক্ষে রমেন বিশ্বাস জানান, সাঁতার শেখানোর জন্য সাত জন প্রশিক্ষক রয়েছে। একসঙ্গে ২৫ জনকে সাঁতার শেখানো হয়। সেই সময় জলে প্রশিক্ষকরা থাকার পাশাপাশি উপর থেকেও নজরদারি রাখা হয়। ওই সুইমিং পুলের গভীরতা অনেক কম রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সব সময় নজর রাখি। তাতে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।” তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে মদ্যপ অবস্থায় কেউ কেউ সুইমিং পুলের জলে নেমে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, “মদ্যপ অবস্থায় কেউ যাতে ঢুকতে না পারে তা দেখা হচ্ছে।”