জলমগ্ন: বৃষ্টির পরে কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
বর্ষা এলেই তেরো নদীর আঠারো ঘাটে জল মাপে সেচ দফতর। কোন নদীর জল কোথায় বাড়ছে তা দেখে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। কিন্তু খালি চোখে সেই মাপে ভুলচুকের আশঙ্কা থাকে। তাই এ বার নদীতে নজর রাখতে ব্যবস্থা হচ্ছে ক্যামেরার।
বর্ষার সর্তকতা শুরু হলে প্রতি ঘণ্টায় সেচকর্মীদের নদীর জল দেখে সেই রিপোর্ট পাঠাতে হয় কন্ট্রোল রুমে। দিনে সমস্যা না হলেও গভীর রাতে অথবা তুমুল ঝড়ে নদীর জলের গতিবিধি বোঝা দুরূহ। সেবকের মতো পাহাড়ের পাথুরে গা বেয়ে নদী খাতে নামার পথ আবার যথেষ্ট বিপজ্জনকও বটে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের সেই পদ্ধতিই এ বার অতীত হতে চলেছে। ক্যামেরা থেকেই বোঝা যাবে নদীতে জলের গতিবিধি।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, কোচবিহারের কোন কোন নদীতে ক্যামেরা বসবে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়েকটি নদীতে ইতিমধ্যে ক্যামেরা বসানো হয়ে গিয়েছে। তিস্তা, জলঢাকা, মানসাই, তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক ১ এবং ২, ডায়না, সঙ্কোশ, মজুনাই, মহানন্দার মতো নদীগুলি এই তালিকায় রয়েছে। জলপাইগুড়িতে বসেই ক্যামেরায় দেখে নেওয়া যাবে কোন নদীতে কত জল বাড়ছে। কোথায় কখন বৃষ্টি হচ্ছে তাও জানা যাবে কন্ট্রোল রুমে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থেকে কোন ব্যারেজ থেকে কত জল ছাড়া হচ্ছে যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য এক ছাদের তলায় বসে স্ক্রিনে দেখে নেওয়া যাবে। সেচ দফতরের জলপাইগুড়ির অফিসে তৈরি হয়েছে রিয়েল টাইম কন্ট্রোল-রুম। এখানকার দৈত্যাকার পর্দায় উত্তরবঙ্গের সব নদীর লাইভ ছবি দেখা যাবে। কন্ট্রোলরুমে বসেই দেওয়া যাবে নিখুঁত পুর্বাভাস, সর্তক বার্তাও। সেচ দফতরের এক কর্তার কথায়, “নদীর জল থেকে বন্যার সর্তকবার্তা দেওয়ার পদ্ধতি বহু পুরনো হয়ে গিয়েছিল। সেই পরিকাঠামো সরিয়ে এবার ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।”
দক্ষিণবঙ্গের নদীগুলিতে ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি শুরু হয়েছে। কলকাতায় জলসম্পদ ভবনে বসেছে কন্ট্রোলরুম। উত্তরবঙ্গের কন্ট্রোল রুম হচ্ছে জলপাইগুড়িতে। আগামী সপ্তাহে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠক করতে জলপাইগুড়িতে আসছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেচমন্ত্রী এ দিন বলেন, “জলপাইগুড়ির কন্ট্রোল রুমের কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব উত্তরবঙ্গেও রিয়েল টাইম পদ্ধতি চালু হয়ে যাবে। যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে উত্তরবঙ্গে ইতিমধ্যে সর্তকতা জারি করে দেওয়া হয়েছে।”
জলপাইগুড়ির ক্লাব রোডের ভবনটিও সাজানো হয়েছে কেতাদুরস্ত ভাবে। বাতানুকুল ঘরে বসলে পাওয়া যাবে সিকিম এবং ভূটানের বৃষ্টি এবং নদীগুলিতে কত জল বাড়ছে তাও জানা যাবে। ভুটানে বেশি বৃষ্টি হলে সেখানকার নদীর জলে ডুয়ার্সে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কোন নদীতে কত জল বাড়ছে সেটি রিয়েল টাইম তথা লাইভ ছবি থাকলে বন্যা মোকাবিলায় ব্যবস্থা গ্রহণ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে বলে আশা দফতরের কর্তাদের।