ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানে অনাহার এবং বিনা চিকিৎসায় শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা মারা যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ দিনে ডুয়ার্সের জয়বীরপাড়া, বান্দাপানী এবং ঢেকলাপাড়া চা বাগানে শ্রমিক পরিবারের অন্তত ৬ জন মারা গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনাহার এবং চিকিৎসার অভাবে ওই বাসিন্দাদের মৃত্যু হয়েছে। মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা সে ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করছেন। দলের মহিলা সংগঠনের তরফে আমিও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বিস্তারিত জানাব।’’
তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ উত্তরবঙ্গে এসে চা বাগানের পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ খবর করে গিয়েছিলেন। একটি শিল্পগোষ্ঠীর বন্ধ হতে বসা চা বাগান সরকারের তরফে অধিগ্রহণ করা হবে বলে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু এরপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চা বাগানের পরিস্থিতি ঠিক রয়েছে দাবি করে কেন্দ্রের সেই উদ্যোগে বাধা দেন।
পর্যটন মন্ত্রী তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পরিকল্পনা সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক গৌতম দেব বলেন, ‘‘উনি যা বলছেন, তা ঠিক নয়। ওই সমস্ত চা বাগানগুলিতে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথভাবে চা বাগানগুলিতে কাজ করার কথা। কিন্তু কেন্দ্র কিছুই করছে না, রাজ্যকেই সব করতে হচ্ছে।’’ মন্ত্রীর দাবি, তাঁরা একাধিকবার চা বাগানগুলিতে গিয়েছেন। বাগান বন্ধের তিন মাস পর থেকেই এখন ফাউলাই-এর সুবিধা মেলে। বাচ্চাদের জন্য আইসিডিএস প্রকল্প চালু হয়েছে, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। টি ডাইরেক্টরেট করে শ্রমিক পরিবারগুলিতে আরও সাহায্যের কাজও শুরু হয়েছে।
রূপার অভিযোগ, নিজেদের পছন্দ মতো না হলে ভাঙচুর লাঠিসোটা নিয়ে মারদাঙ্গা-আন্দোলন করা, এটাই এখন এই রাজ্যের নীতি। কোনও কিছু ঘটলে মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর মতো বিবৃতি দিচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসন তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করছে। রাজ্যে ভয়ের রাজনীতি চলছে বলে রূপার অভিযোগ। প্রশাসন আগাম ব্যবস্থা না নেওয়ায় নারী নির্যাতন বাড়ছে। উলুবেরিয়ায় মহিলার উপর অত্যাচারের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নিলে বড় ধরনের আন্দোলন হবে বলে জানান।
সিঙ্গুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সে রাজ্যে হাইওয়ে আটকে মুখ্যমন্ত্রীর সভা হয় সেখানে কোনও দিন শিল্পপতিরা আসবেন? যাঁরা এটা দেখছেন তাদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে? সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক চাষিদের জমি নেওয়াটা অন্যায় হয়েছে। সে সময় তাদের যোগ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। এখন বর্তমান রাজ্য সরকার আবার সেই জমি ফেরাতে চাইছে। ওই জমিতে চাষ সম্ভব কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেত্রী। পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘‘ওঁর এ সব বক্তব্য সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে নয়। সভা যেখানে হচ্ছে সেখানে হাইওয়ের আরেক দিক দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। তাই এ সব কথার উত্তর দেওয়ার প্রযোজন রয়েছে বলে মনে করি না।’’