শীত যায়নি, তবু বসন্ত এসে গেছে

হিমেল বাতাসের মধ্যেই রোদের ওম গায়ে মেখে সোমবার সকাল থেকে তাই পথে নামল প্রায় গোটা উত্তর। তিস্তা-তোর্সা-মহানন্দা-আত্রেয়ী-কুলিক পাড়ের শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি-কোচবিহারই হোক বা গঙ্গাপাড়ের মালদহ, সব জায়গাতেই একই ছবি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২০
Share:

পুজোর পরে নিজস্বীর ধুম। রায়গঞ্জে। ছবি: গৌর আচার্য

প্রকৃতিতে এখনও আসেনি বসন্ত। তবে ক্যালেন্ডারে বসন্ত পঞ্চমী। হিমেল বাতাসের মধ্যেই রোদের ওম গায়ে মেখে সোমবার সকাল থেকে তাই পথে নামল প্রায় গোটা উত্তর। তিস্তা-তোর্সা-মহানন্দা-আত্রেয়ী-কুলিক পাড়ের শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি-কোচবিহারই হোক বা গঙ্গাপাড়ের মালদহ, সব জায়গাতেই একই ছবি। স্কুল‌ে-কলেজে-মণ্ডপে যেমন ভিড়, দিনভর জমজমাট ছিল বেড়ানোর জায়গাগুলিও।

Advertisement

উৎসবে একান্তে

সোমবার বন্ধ থাকে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক। কিন্তু সরস্বতী পুজোয় যে রুটিন ভাঙাই রুটিন। অভিভাবকদের হাত ধরা কচিকাঁচারা ছিল। তবে পার্ক এ দিন ছিল মূলত তরুণ তরুণীদের দখলে। বিভিন্ন প্রান্তে, রেঁস্তোয়ার বসে গল্প, আড্ডায় মাততে দেখা গিয়েছে তাঁদের। এ দিন রায়গঞ্জের মিউনিসিপ্যাল পার্ক, কর্ণজোড়া পার্ক, ইকো পার্ক ও কুলিক পক্ষীনিবাসেও প্রিয়বন্ধুকে পাশে নিয়ে একান্তে সময় কাটাতে দেখা গিয়েছে বহু পড়ুয়াকে। নজরকাড়া ভিড় ছিল ধূপগুড়ি পার্কেও। দিনভরই পার্কে পা ফেলবার জায়গা ছিল না। ভিড় সামাল দিতে নামতে হয় পুলিশকেও। একই ছবি জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি পার্ক, তিস্তা উদ্যান, ইসলামপুর পার্কেও। তিস্তার চরেও নির্জনতা খুঁজে নিয়েছেন অনেকে।

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেবী

সর্বত্রই সেলফি তোলার ধূম। এই সেলফি তুলতে গিয়েই শিলিগুড়িতে এক মন্দিরে পুরোহিতের ধমক খেলেন কয়েকজন ছাত্রী। দেবীর দিকে পিছন ফিরে ছবি তোলা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে পড়ুয়ারা সেলফির ‘পোজ’ পাল্টাল। তাতে তখনকার মতো শান্ত হলেন পুরোহিত। সেলফির অলিখিত প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছে সর্বত্রই।

স্টুডিও সুনসান

সরস্বতী পুজোতে প্রথম শাড়ি পরে স্টুডিওমুখী ভিড়টা হারিয়ে গিয়েছে। শহর থেকে গ্রামে সর্বত্রই একই ছবি। ভিড় নেই। তাই হাহাকার স্টুডিওগুলিতে। এক স্টুডিও মালিক বললেন, ‘‘আগে এই দিনটায় অনেক রাত পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকত। আলাদা করে লোক রাখতে হত। এখন তার চার ভাগের এক ভাগ লোক হয় না। আসলে হাতে হাতে স্মার্ট ফোন চলে আসায় কমে গিয়েছে স্টুডিওতে ছবি তোলার ঝোঁক। ’’ চার দেওয়ালের বাইরে বন্ধুদের নিয়ে পছন্দের জায়গায় মনের মতো ছবি তোলার ছবি দেখা গিয়েছে।

শাড়ি থেকে শেরওয়ানি

সরস্বতী পুজোতেও ছেলেদের পাঞ্জাবির উপর মোদি জ্যাকেট। রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট বা মালদহ-সর্বত্র সেই ছবি। কোথাও কোথাও মেয়েদের শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধুতি পাঞ্জাবিতেও সেজেছিল ছেলেরা।

সম্প্রীতির পুজো

সকাল থেকেই ঘরের এক কোণে অংশু রায়ের সঙ্গে নৈবেদ্য গোছাতে ব্যস্ত ছিল জবা পারভিন৷ গাঁদা ফুলে মালা গাঁথা ততক্ষণে শেষ। খানিক্ষণ পর পুরোহিতের পুজো শেষ হতেই সবাই একজোট হয়ে অঞ্জলি৷ সরস্বতী পুজোকে ঘিরে রবিবারই সম্প্রীতির ছবি দেখা গিয়েছিল বেরুবাড়ির নিউ অমরখানা প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ সোমবার একই ছবি ধরা পড়ল জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরের প্রেমগঞ্জ চর প্রাথমিক স্কুলে৷ স্কুলের শিক্ষক নির্মল সরকার জানান, তাঁদের স্কুলে কোনও ভেদাভেদ নেই৷ সবাই সারা বছর একসঙ্গে পড়াশোনা করে৷ সরস্বতী পুজোও।

গ্রাম বাংলা

গ্রাম বাংলার ছাঁচ পুজো মণ্ডপে। সাবেকি প্রতিমা, আলোও সাধারণ। সরস্বতী পুজোয় এমনই ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মালদহ বার্লো বালিকা বিদ্যালয়। তবুও স্কুলে ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য মোতায়েন পুলিশ। শুধু স্কুলের ভিতরেই নয়, রাস্তার দু’ধারে পুলিশের ব্যারিকেড। কারণ বেলা বাড়তেই স্কুলে উপচে পড়ল ভিড়। দুপুর ১টার পর স্কুলে কার্যত তিল ধারণের জায়গা নেই। ভিড় সামাল দিতে হিমসিম পুলিশ। এক মহিলা পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ভিড় দেখে মনে হচ্ছে মালদহে অষ্টমীর রাত।”

সুবর্ণ জয়ন্তীর পুজো

ফালাকাটার দুই উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব, তার মধ্যেই সরস্বতী পুজা। তাই ওই দুই স্কুলে সরস্বতী পুজার আমেজ অন্য সব স্কুলের চেয়ে একটু বেশিই। ফালাকাটার রাইচেঙ্গা বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় ও ফালাকাটা যাদবপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের বছরভর চলছে নানা অনুষ্ঠান। সেই উৎসবেই বাড়তি মাত্রা সরস্বতী পুজা। দিনভর নতুন পুরানো পড়ুয়াদের ভিড় ছিল দেখার মত। সরস্বতী পুজা উপলক্ষে ভিড় উপচে পড়েছে ফালাকাটা পার্কেও।

সরস্বতী পুজাতেও থিম

কোথাও সাম্প্রদায়িকতা আবার কোথাও মদ্যপানের বিরোধিতা। সরস্বতী পুজোতেও থিমের ছড়াছড়ি আলিপুরদুয়ারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সলসলাবাড়ি ‘নব প্রজন্ম’ সংঘ। পুজার ওদের থিম ‘শিকারি ও শিকার’। এখানে শিকারি হচ্ছে মদ আর তার শিকার হচ্ছে যুব সমাজ। মণ্ডপ ভাবনা জলপাইগুড়ি জেলার চালসা হাইস্কুলের শিক্ষক বিমল চন্দ্র সাহার। বিমলবাবু বলেন, “ ১৯৮০ সাল থেকে সরস্বতী পুজা করে আসছে এই ক্লাব। যুব সমাজকে গ্রাস করছে মাদকে আসক্তি। তার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তেই এই ভাবনা। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর সামান্য প্রয়াস এটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন