রব্বানি, অমলের সুরক্ষায় পুলিশ

জেলা পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘নদিয়ার ঘটনার পর জেলা পুলিশ জেলার চার তৃণমূল বিধায়কের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। তাঁদের উপর কারও রাজনৈতিক, দলীয় ও ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ-ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৩
Share:

ভয়: পুলিশের উদ্ধার করা বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। রায়গঞ্জে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। নিজস্ব চিত্র

নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়কের খুনের ঘটনার পর উত্তর দিনাজপুর জেলার বিধায়কদের একাংশের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে জেলা পুলিশ। ইটাহার, করণদিঘি, ইসলামপুর, চোপড়া ও গোয়ালপোখরের বিধায়কদের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।

Advertisement

জেলা পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘নদিয়ার ঘটনার পর জেলা পুলিশ জেলার চার তৃণমূল বিধায়কের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। তাঁদের উপর কারও রাজনৈতিক, দলীয় ও ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ বর্তমানে ইটাহারের অমল আচার্য, করণদিঘির মনোদেব সিংহ, গোয়ালপোখরের গোলাম রব্বানি, চোপড়ার হামিদূর রহমান— এই চার বিধায়কের একজন করে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে।

গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানি রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে, ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক অমল আচার্য জেলা তৃণমূল সভাপতির দায়িত্বে। মন্ত্রী হিসেবে গোলাম রব্বানি পাইলট কারে একজন সহকারী সাব ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার পুলিশকর্মী-সহ তিনজন পুলিশকর্মীও তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বিধায়কের উপর হামলার আশঙ্কা নিয়ে কোনও তথ্য এখনও নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে জেলায় দলীয় পদ বণ্টন, দলে ক্ষমতা দখল, ঠিকাদারি ছাড়াও নানা কারণে আর্থিক লেনদেন নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে সেই দ্বন্দ্বের জেরে বিধায়কদের উপর হামলার আশঙ্কা কতটা রয়েছে সেই বিষয়ে ডিআইবিকে খোঁজ নিয়ে জেলা পুলিশের কাছে তথ্য পেশ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ইসলামপুর ও করণদিঘির একেবারে পাশেই বিহার। সেখান থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকে যাতে ওই দুই এলাকার বিধায়কদের উপর হামলা চালাতে না পারে, সেইদিকেও সতর্ক রয়েছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সুপারের দফতর থেকে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেলার কোনও তৃণমূল বিধায়কের নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। বিধায়কদের নির্বাচনী প্রচারের জন্য বহু জনসভায় যোগ দিতে হবে। ফলে সেইসব জনসভায় তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের নজরে থাকবে।

কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায় বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে একজন নিরাপত্তারক্ষী নিয়েছি। তবে তৃণমূলের মতো সবসময় নিয়ে ঘুরি না।’’ রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত কখনই নিরাপত্তা রক্ষী নেননি। তিনি বলেন, ‘‘শাসক দলের কাজকর্ম দেখে মাঝেমধ্যে আশঙ্কা হলেও তা নিয়ে খুব বেশি ভয় পাই না।’’ নিরাপত্তা রক্ষী নেন না রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘কর্মীরা, সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হবেন। আমি নিরাপত্তা নিয়ে কী করব? অপরাধীদের যদি ধরা হয় তা হলেই নিরাপত্তা ঠিক থাকবে। তা তো হচ্ছে না।’’

ইটাহারের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের আশঙ্কা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বিজেপি গুন্ডামি করেছে। তাই শুধু বিধায়কই নয়, জেলার তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের উপর হামলা চলতে পারে। তবে জেলায় দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেন।

গোলাম রব্বানির দাবি, জেলার সমস্ত তৃণমূলের নেতা ও কর্মী সতর্ক রয়েছেন। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ লাহিড়ির পাল্টা দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়েছে। তোলা আদায়, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাৎ, ঠিকাদারি কাজের বখরা, দলীয় পদ পাওয়া নিয়ে সহ নানা কারণে জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে রয়েছে। তাই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই তাদের বিধায়ক ও নেতাদের উপর হামলা চালাতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন