প্রতীকী ছবি।
আগামী কাল, সোমবার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছিল। নবম শ্রেণির ছাত্রী বছর পনেরোর সেই নাবালিকার বিয়ের খবর জানতে পেরে স্কুল শিক্ষকেরাই উদ্যোগী হয়ে বিয়ে রুখলেন। তাঁরাই খবর পৌঁছন চাইল্ড লাইন থেকে শুরু করে পুলিশ ও প্রশাসনের দফতরে। মালদহের হবিবপুর ব্লকের দাল্লা চরণতলার ঘটনা। মেয়েটি সেখানে মামার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে।
চাইল্ড লাইন ও পুলিশ শুক্রবার রাতে ওই ছাত্রীর মামার বাড়ি যায়। ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেবেন না বলে কথা আদায় করে তারা ছাত্রীর দিদার কাছ থেকে মুচলেকাও আদায় করে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকেরা তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছে না। অভিজ্ঞতার নিরিখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে অন্য শিক্ষকদের আশঙ্কা, মুচলেকা দিলেও সোমবার গোপনে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাবে না তো?
কিন্তু কেন এমন আশঙ্কা? ওই স্কুল সূত্রেই খবর, গত বছরই জুলাই মাসে আড়াগাছির বাসিন্দা স্কুলের আর এক নবম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ের খবর সহপাঠীদের কাছ থেকেই পান শিক্ষকেরা। বছর ষোলোর মেয়েটিও ওই বয়সে বিয়ে করবে না বলে স্কুলে এসে শিক্ষকদের জানায়। এটা জানার পরেই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ছুটে যান মেয়েটির বাড়িতে। পরিবারের লোকজনকে বোঝানো হয়। শিক্ষকদের দাবি, পুরো ঘটনা হবিবপুরের তত্কালীন বিডিওর নজরে আনা থেকে শুরু করে চাইল্ড লাইন ও পুলিশের কাছেও জানানো হয়েছিল। এমনকী বিয়ের খবর ফাঁস করেছে এই সন্দেহে স্থানীয় এক বাসিন্দাকে মেয়েটির পরিবারের তরফে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল। শিক্ষকেরা ফের মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, নির্দিষ্ট দিনে মেয়েটির গোপনে বিয়ে দিয়ে দেন পরিবারের লোকেরা। সে এখন সংসারও করছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, প্রশাসনিক ঢিলেমিতেই সে দিন নাবালিকা ওই মেয়েটির বিয়ে বন্ধ করা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মেয়েটির বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলায়। ছোট থেকে সে দাল্লা চরণতলাতেই তাঁর মামা বাড়িতে থাকে ও সেখান থেকেই লেখাপড়া করছিল। পাশেই বামনগোলা ব্লকের পাকুয়াহাটের বাসিন্দা মুম্বইতে দিনমজুর এক যুবককে পাত্র স্থির করা হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শনিবার বলেন, “মুচলেকা দিলেও বিয়ে সোমবার আদৌ বন্ধ হবে কি না তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। কেন না, আমরা অভিজ্ঞতার নিরিখে দেখেছি মুচলেকা দিলেও পরে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে গোপনে। আমাদের স্কুলের কয়েকজন মেয়েরই এমন হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, এখন স্কুলে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা চলায় নবম শ্রেণির পড়ুয়ারা কেউই স্কুলে আসছে না। ফলে ওই মেয়েটির পরিস্থিতি জানা যাচ্ছে না। তাঁদের দাবি, প্রশাসন নজরে রাখুক। হবিবপুরের বিডিও শুভজিৎ জানা বলেন, ‘‘আমরা নজর রাখছি।’’ ছাত্রীর পরিবারের কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।