গবেষণা-কেন্দ্র গড়তে দশ লক্ষ দান বিজ্ঞানীর

ভবিষ্যতে পড়ুয়ারা যাতে গবেষণায় যেতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোতে চান তাপসবাবু। তার ওই উদ্যোগের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন ও পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চ।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৩
Share:

তাপস কুণ্ডু।

উত্তরবঙ্গের গণ্ডি ছাড়িয়ে তাঁর পরিচিতি এখন দেশ তথা বিশ্বে। কিন্তু শিকড়ের টান তাঁর উত্তরবঙ্গেই। সেই টানেই সাম্মানিক হিসেবে পাওয়া দশ লক্ষ টাকা বিজ্ঞান-গবেষণা কেন্দ্র গড়তে দিতে চান বিজ্ঞানী।

Advertisement

ভাটনগর পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির বাসিন্দা তাপস কুণ্ডু সম্প্রতি রাজ্য সরকারের ‘বঙ্গরত্ন’ সম্মান পেয়েছেন। সেই মঞ্চেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর প্রস্তাবের কথা জানান। তিনি ঠিক করেছেন, কেন্দ্রটি হবে মালদহে। নামকরণ হবে ‘স্বামী বিবেকানন্দ চিলড্রেন ইনোভেশন সেন্টার।’ মুখ্যমন্ত্রী তাপসবাবুর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তার কালীঘাটের বাড়িতে লিখিত খসড়া প্রকল্প পাঠাতে বলেছেন।

বর্তমানে বেঙ্গালুরুতে জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্স সায়েন্টিফিক রিচার্সের সঙ্গে যুক্ত তাপসবাবু গত ১০ বছর ধরে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এই চার জেলার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মালদহে ক্যানসার বিষয়ে কর্মশালা করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই সময় দেখেছি প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে প্রচুর মেধাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। কিন্তু তাদের মেধার বিকাশের জন্য স্কুলস্তরে আধুনিক মানের ল্যাবরেটরি নেই। সে কারণেই উন্নত ও অত্যাধুনিক পরিকাঠামোর বিজ্ঞান-কেন্দ্র গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

ইতিমধ্যে বিভিন্ন পুরস্কার থেকে পাওয়া ১০ লক্ষ টাকাও তাপসবাবু এ জন্য দান করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই কেন্দ্রে অঙ্ক, রসায়ন, পদার্থ, জীববিদ্যা-সহ বিজ্ঞানের সমস্ত শাখা ও প্রি-মেডিক্যাল শাখার ছেলেমেয়েদের নিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হবে। এখানে ছাত্রছাত্রীরা হাতেকলমে প্রশিক্ষণের সুবিধা পাবে।’’ তিনি জানান, আধুনিক মানের ছোট ছোট গবেষণাগার এবং তার সঙ্গে সামজ্ঞস্য রেখে তৈরি হবে ক্লাসরুম।

ভারতের বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা এসে প্রশিক্ষণ দেবেন এই কেন্দ্রে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তাপসবাবুর কথাও হয়েছে। তিনি জানান, কলকাতার আচার্য জগদীশচন্ত্র বসু ইন্সিটিটিউট ও বিড়লা সায়েন্স সেন্টার থেকেও বিজ্ঞানীরা প্রশিক্ষক হিসাবে মালদহে আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। তাপসবাবু নিজেও বায়োলজি ও বায়োকেমিস্ট বিষয়ে মাসে দুবার বেঙ্গালুরু থেকে মালদহে প্রশিক্ষণ দিতে আসবেন। তৈরি হয়ে গেলে এই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পড়ুয়ারা নিজেরাই পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের ডিএনএ দেখতে পারবে। অনুবীক্ষণ যন্ত্রও নিজেরা তৈরি করতে পারবে। গবেষণার মাধ্যমে সিভি রমন এফেক্টও পড়ুয়ারা করতে পারবে। সারাবছর ধরে দফায় দফায় ওই প্রশিক্ষণ চলবে। বছরের শেষে সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা থাকবে।

ভবিষ্যতে পড়ুয়ারা যাতে গবেষণায় যেতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোতে চান তাপসবাবু। তার ওই উদ্যোগের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন ও পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চ। ইতিমধ্যে মালদহে ওই কেন্দ্রটি গড়ার জন্য কয়েক জায়গায় জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্য সরকার রাজি হলে অচিরেই কেন্দ্রটি গড়ার কাজ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন