মহানন্দার চরে উচ্ছেদ ঘিরে তপ্ত শিলিগুড়ি

নদীর চর থেকে দখল সরানোর হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতেও রাজনীতি বাধা হল শিলিগুড়িতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৮
Share:

পে-লোডার ঘিরে পাথর হাতে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র

নদীর চর থেকে দখল সরানোর হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতেও রাজনীতি বাধা হল শিলিগুড়িতে।

Advertisement

শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ শিলিগুড়ির মহানন্দার চর দখলমুক্ত করার অভিযান শুরুর দু’ঘণ্টার মধ্যে প্রবল বাধায় কর্তৃপক্ষ পিছু হঠে। অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মহানন্দা নদী লাগোয়া গুরুঙ্গবস্তি এলাকা। ডেপুটি মেয়রের ওয়ার্ড অফিসে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে দখলকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে। পুরকর্মীদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

পুরসভায় ক্ষমতাসীন বামেদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতারাই দখলদারদের উস্কানি দিয়ে বিক্ষোভ করিয়েছে। শাসক দলের নেতাদের নির্দেশেই পুলিশ এবং সেচ দফতরও যথাযথভাবে সক্রিয় না হওয়ায় অভিযান মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, পুরসভায় ক্ষমতাসীন বাম নেতারা টাকার বিনিময়ে চরে দখলদার বসিয়েছিল। সে কারণেই দখলদাররা বাম নেতাদের বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

Advertisement

মহানন্দা দূষণ নিয়ে হাইকোর্টের গ্রিন ট্রাইব্যুনালে সম্প্রতি মামলা দায়ের হয়। মামলার শুনানিতে নদীখাত থেকে খাটাল-সহ সব ধরণের দখল সরানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইবুনাল। খাটাল সরাতে বলা হয় পুরসভাকে।

হিলকার্ট রোডে মহানন্দা সেতু লাগোয়া এলাকায় এ দিন সকাল থেকে অভিযান শুরু হয়। নদী খাত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় চারটি খাটাল। পে লোডার দিয়ে ভাঙা হয় কংক্রিটের তৈরি দু’টি ঘর। বেলা গড়াতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশের সামনেই পুরকর্মীদের দিকে তেড়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। পে লোডারের সামনেও দাঁড়িয়ে পড়েন বিভোক্ষকারীরা। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। মহানন্দা নদী লাগোয়া গুরুঙ্গ বস্তিতে ডেপুটি মেয়র তথা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি কাউন্সিলর রামভজন মাহাতোর অফিস। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ একদল লোক অফিসে চড়াও হয়। অফিসের শাটারের দরজা তুলে শুরু হয় ভাঙচুর। লোহার আলমারি থেকে দেওয়ালে ঝোলানো এলইডি টিভি ভাঙচুর হয়। প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল গুড়িয়ে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। বামেদের অভিযোগ তৃণমূল জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। মেয়র অশোক ভট্টাচার্য ওয়ার্ড অফিসের অবস্থা দেখতে যান। অশোকবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের নির্দেশেই প্রথম থেকে পুলিশ-প্রশাসন দখল বিরোধী অভিযানে সাড়া দেয়নি। তৃণমূলের লোকেরাই অফিসে ভাঙচুর চালায়। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’

ঘটনাচক্রে, প্রধাননগরের কাছাকাছি এলাকায় এক নম্বর বোরের সামনে মেয়রের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান আন্দোলন করেছে তৃণমূল নেতারা। সেখানে মেয়র তথা বাম নেতাদের বিরুদ্ধে নদীর চরে দখলদার বসানোর অভিযোগ তোলেন তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল-সহ অন্য নেতারা। কৃষ্ণবাবুর অভিযোগ, ‘‘যাঁরা উচ্ছেদ করতে গিয়েছেন এবং যাঁরা উচ্ছেদ হয়েছেন সকলেই একপক্ষের লোক। অভিযানের আগে কিছুই জানানো হয়নি। সব লোক দেখানো।’’ তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকারের অভিযোগ, ‘‘মহানন্দার চরে বাম নেতারা টাকা নিয়ে দখলদার বসিয়েছে। সে কারণেই এখন ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার সমর সরকার বলেন, ‘‘পুরসভাই অভিযান চালিয়েছে। আমাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। সেই মতো আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।’’

এ দিন অভিযানে গিয়ে পুরকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। অভিযোগ, প্রকাশ্যে পুরকর্মীদের গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া হলেও পুলিশ নীরব ছিল। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি এস লেপচা বলেন, ‘‘সব পক্ষের অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন