পুরনো গাড়ির ধোঁয়ায় দম বন্ধ শিলিগুড়ির, খোঁজ সমীক্ষায়

সমীক্ষা বলছে শহরের ৪২-৪৫ শতাংশ দূষণে দায়ী গাড়ির ধোঁয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ১২:২০
Share:

দূষণ: শহরের রাস্তায় রোজই এরকম ধোঁয়া ছড়িয়ে যাতায়াত করে অসংখ্য গাড়ি। শিলিগুড়ি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১১টা বেজে ২০ মিনিট। সোমবার সেবক মোড় লাগোয়া হিলকার্ট রোড়ের মার্কেট স্টপেজে তখন অটো, বাস, পিকআপ ভ্যান মিলিয়ে গোটা তিরিশ গাড়ির লম্বা লাইন। তার উপর রয়েছে টোটো, বাইক, ভ্যানরিক্সার জট। তার মধ্যে দিয়েই বাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন শিবমন্দিরের বাসিন্দা সুকান্ত দেব। বাইকের পিছনে কোলে বাচ্চা নিয়ে বসেছিলেন তাঁরা স্ত্রী। যানজটের জেরে পড়ে গেলেন দু’টি অটোর মাঝে। জটে থমকে থাকা অটো দিয়ে তখন গলগল করে বেরচ্ছে কালো ধোঁয়া। আর তার চোটে নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে কোলের বাচ্চা।

Advertisement

মিনিট পাঁচেক পরে জট থেকে ছাড়া পেয়েই কাছের একটি দোকানে বাইক থামালেন সুকান্ত। জল চেয়ে চোখেমুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলেন কিছুক্ষণ। তাঁ স্ত্রীর অবস্থাও তাই। পরে সুকান্ত বললেন, ‘‘ধোঁয়ায় চোখ জ্বলে যাচ্ছিল। দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। বাচ্চাটারও খুব কষ্ট হয়েছে।’’ শিলিগুড়ি শহরের রাস্তায় রোজই এরকম একাধিক ছবি দেখা যায়। শুধু বাইক বা গাড়ির আরোহী নয়, ধোঁয়ায় সমস্যায় পড়েন পথচারীরাও। একটি সমীক্ষা বলছে শিলিগুড়ি শহরের ৪২-৪৫ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ী গাড়ির ধোঁয়া এবং যানজট। শহরের দূষণ ও যানজট নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ করার কথা বলেছেন প্রশাসনের কর্তারা। নাগরিকদের অভিযোগ, সেগুলোর কোনওটি বাস্তবায়িত হয়নি। যার জেরে সোমবার বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসে উদ্বেগের কথা শুনিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।

সুইৎজারল্যান্ডের একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে শিলিগুড়ি পুরনিগম। সেই প্রকল্পে শহরে চারটি ‘এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন’ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি দূষণ সংক্রান্ত সমীক্ষাও করেছেন বিদেশি সংস্থার কর্মীরা। তাতেই উঠে এসেছে পরিবহন থেকে দূষণ ছড়ানোর বিষয়টি। বছরখানেক আগে শিলিগুড়ির দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে কলকাতার মতো বড় শহরকে পিছনে ফেলে টেক্কা দিচ্ছিল দিল্লির সঙ্গে। সুইস সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দূষণের ফলে শহরের জলবায়ুর উপরেও প্রভাব পড়ছে। তাঁদের বক্তব্য, শহরে চলাচল করা পুরনো অটো, বাস, ট্রাক, গাড়ির ধোঁয়া থেকে মারাত্মক দূষণ ছড়াচ্ছে। তীব্র যানজটের কারণে বেশি করে পুড়ছে জ্বালানি। যার ফলেও বেড়ে যাচ্ছে দূষণের মাত্রা। সমীক্ষা অনুসারে গৃহস্থালী ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বাতানুকুল যন্ত্র ও অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকেও ছড়াচ্ছে দূষণ।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘প্রশাসন, পুরসভার পাশাপাশি বসুন্ধরা দিবসে দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি সচেতন নাগরিকের শপথ নেওয়া উচিত। অটোর বদলে কম দূষণ ছড়াবে এমন ম্যাক্সিক্যাব চালুর কথা শুধু শুনেই যাচ্ছি। পুরনো গাড়ি চলাচল একেবারে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’ সমাজকর্মী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যানজট নিয়ন্ত্রণে শহরের রাস্তায় গ্রিন লাইনের যথাযথ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। টোটোতেও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।’’ শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসন, পুলিশ ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সমন্বয় রেখে কাজ করার চেষ্টা করছি। রাজ্যের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পেলে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন