ফুলবাড়ি ব্যারাজে পর্যটন কেন্দ্রের উদ্যোগ

উত্তরবঙ্গের পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আকর্ষণস্থল ফুলবাড়ি ব্যারাজ লাগোয়া এলাকাকে ঘিরে নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, চলতি মাসের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়ি এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০২:১৫
Share:

ব্যারাডের এই অংশেই ভিড় করে থাকে পরিযায়ীরা। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তরবঙ্গের পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আকর্ষণস্থল ফুলবাড়ি ব্যারাজ লাগোয়া এলাকাকে ঘিরে নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, চলতি মাসের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়ি এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র। ফুলবাড়ির পরিযায়ী পাখি-সহ এলাকার বিষয়ে জানার পর দার্জিলিং জেলা প্রশাসনকে পর্যটন প্রকল্পের প্রস্তাব তৈরি করে পাঠানোর নির্দেশ দেন মুখ্য সচিব।

Advertisement

ফুলবাড়ি ব্যারাজের একটি বিরাট অংশ দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের মধ্যে রয়েছে। সামান্য কিছু অংশ জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের অধীনে। ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিডিও বীরুপাক্ষ মিত্র ওই রিপো র্টটি তৈরি করে গত সপ্তাহে শিলিগুড়ির মহকুমা শাসকের কাছে জমা দেন। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের জেলাশাসকের মাধ্যমে তা কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।

মহকুমা শাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, ‘‘ফুলবাড়ি পরিযায়ী পাখির বিষয়টি দেশ-বিদেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর প্রচুর মানুষ এলাকায় আসেন। কিন্তু এলাকায় পরিকাঠামোর ব্যবস্থা নেই। মুখ্য সচিব আমাদের প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করতে নির্দেশ দেন। এ দিন রিপোর্টটি কলকাতা পাঠানো হয়েছে।’’

Advertisement

ফুলবাড়িতে মহানন্দা নদীকে ঘিরের সেচ দফতরের মহানন্দা ব্যারাজ ডিভিশন, ক্যানাল রয়েছে। সেখান থেকে জল ব্যারাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের দিকে যায়। ব্যারাজের পিছনে প্রায় ১০ স্কোয়ার কিলোমিটার জুড়ে স্থায়ী জলাশয় তৈরি হয়েছে। এই ‘ব্যাক ওয়াটার’কে ঘিরেই পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা লেগে থাকে। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে নিয়েই হিমালয়ের একটি বড় অংশ এলাকা থেকে দেখা যায়। বিরাট জলাশয়ে প্রচুর রকম মাছ ছাড়াও কীটপতঙ্গ, নানা ধরনের গাছ-গাছড়া রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে বিভিন্ন সরকারি মহল কথাবার্তাও বলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর কথায়, ‘‘ফুলবাড়িকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তৈরির পরিকল্পনা চলছে।’’ এলাকাটি সেচ দফতরের আওতায় রয়েছে। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তরফে যা যা সাহায্য জেলা প্রশাসনের প্রয়োজন, সব করা হবে।’’

ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মানস সরোবর-সহ হিমালয়ের উপরের অংশ থেকে রুডি শিলড ডাকস, বার হেডেস গুস, এশিয়ান ওপেন বিলড স্ট্রোক, কমন কুট, ব্রাউন হেডেড গুল, করমোরান্ট, মার্শ হ্যারিয়র-সহ ২৫ রকম প্রজাতির কয়েক হাজার পাখিদের ফুলবাড়িতে দেখা মেলে। আরও নানা ধরনের পাখিও থাকে। ফুলবাড়ি ছাড়া গজলডোবা এবং কুলিক এলাকাতেই একমাত্র এমন পরিযায়ী পাখিদের দেখা মেলে। দুই জায়গাকে ঘিরেই ইতিমধ্যে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। প্রশাসনের অফিসারেরা জানিয়েছেন, এলাকায় মানুষের অবাধ ঘোরাফেরার জন্য পাখির সংখ্যা গত দুই বছর আগেও ১০ হাজারের মতো হয়ে যায়। শেষে পিকনিক, শব্দ দূষণ বন্ধ করার মতো ব্লক প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবার শীতের মরসুমে প্রায় ৩৫ হাজার পরিযায়ী পাখি ফুলবাড়িতে এসেছে।

মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্টে বলা হয়ে‌ছে, এলাকার দুই ধারের বাঁধের পাশে প্রথমেই শাল, সেগুন, আমলকি, কুল, আম, লেবু বা কলা গাছ লাগাতে হবে। ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে ওই কাজ করলে বাঁধের সংরক্ষণ যেমন হবে, তেমনই পাখিদের বাসা এবং খাবারের স্থায়ী ব্যবস্থা হবে। ব্যারাজের আরেক পাশের ফাঁকা এলাকায় স্থায়ী শেড, শৌচাগার, বসার ব্যবস্থা, ছোটদের খেলার উপকরণ বসিয়ে টিকিট দিয়ে দিনভর সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এলাকাটিতে মৎসজীবীদের নিয়ে ‘শিকারা’ জাতীয় নৌকা তৈরি করে নৌকাবিহারের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এতে তাঁরাও রোজগার করতে পারবেন।

ব্যারাজের সামনে অংশের জলাশয়ে উত্তরবঙ্গের হারিয়ে যেতে থাকা মহাশোল, বোরলি, কোকসা, ভোলা, চেলা, পাথরচাটা, কালাবাটা, বাতাসি-মত মাছের চাষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এলাকাটিকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য রঙিন এবং গলদা চিংড়ি চাষের কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটক, পাখি প্রেমীদের কাছে আকষর্ণ আরও বাড়াতে ব্যারাজের কন্ট্রোল রুম এলাকায় সুদৃশ্য কটেজ তৈরির কথাও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে। বিডিও জানিয়েছেন, ফলের গাছ থেকে নৌকাবিহার, মাছ চাষ, পিকনিক স্পট সব কিছুতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের জড়িত রাখতে পারলে তাঁদের কর্মসংস্থান বাড়বে। প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও উঠে আসবে।

ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনে কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে পযর্টকদের ঘোরানোর জায়গায় খুব অভাব। শপিং মল, টয়ট্রেন, বৌদ্ধগুম্ফা বা কিছু পার্ক রয়েছে। কেন্দ্রটি তৈরি হলে শহরের আকর্ষণ বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন