মর্মান্তিক: মায়ের দেহের সামনে বিপ্লব। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
পরীক্ষা দিতে দিতে বারবার মায়ের মুখটাই মনে পড়ছিল বিপ্লবের। শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তাঁর মা। তবুও ভেঙে পড়েননি মালদহের মানিকচক থানার মথুরাপুরের বিপ্লব মণ্ডল।
মায়ের কঠোর পরিশ্রমেই এতদূর পড়াশোনা বিপ্লবের। তাই মায়ের স্বপ্ন সফল করতেই এ দিন পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। তারপর বাড়ি ফিরে মায়ের সৎকারও করতে হয়েছে তাঁকে।
শুক্রবার ভোর চারটা নাগাদ পড়াশোনা করছিলেন বিপ্লব। তখনই তিনি বুকের যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেন মা জমিলা দেবীকে। তাঁকে তড়িঘড়ি মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ঘণ্টাখানেক বাদেই মৃত্যু হয় জমিলা দেবীর। সকাল ন’টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে জমিলা দেবীর দেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন বিপ্লবরা। তিনি বলেন, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পর ভাবিনি পড়াশোনা করতে পারব। মায়ের ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে চাকরি পেয়ে ঘরের হাল ধরব।’’
বছর চারেক আগেই বিপ্লবের বাবা নিখিল মণ্ডল বিহারে এক পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। তারপর থেকেই বিপ্লব-সহ পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসারের দায়িত্ব সামলেছেন জমিলা দেবী। ছেলেমেয়েদের পড়শোনা করানোর জন্য জমিতে কাজ করতেন তিনি। বড়ো ছেলে উত্তম ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। বিপ্লব সব থেকে ছোট। তাঁর দিদিরা সকলেই কলেজে পড়াশোনা করছেন। বিপ্লব মথুরাপুর বিএস হাই স্কুলের কলা বিভাগের ছাত্র। এনায়েতপুর হাই স্কুলে প্রথম দিনের বাংলা পরীক্ষা সুষ্ঠ ভাবেই দিয়েছেন বিপ্লব।
এনায়েতপুর হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুনন্দ মজুমদার বলেন, ‘‘পরীক্ষা দিতে দিতে ছেলেটাকে চোখের জল মুছতে দেখেছি।’’ পরের পরীক্ষাগুলোয় বিপ্লবকে সবরকম সাহায্য করার কথা জানিয়েছেন তিনি।