অকাল-ছুটির বিরুদ্ধে পথে পড়ুয়ারা

টানা ছুটিতে পঠন-পাঠনের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিড ডে মিলও। ফলে জেলার পড়ুয়া, অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষকদের একটা অংশের মধ্যেও টানা এই ছুটি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০৫:৫৬
Share:

দাবি: পড়ুয়াদের মিছিল আলিপুরদুয়ারে। নিজস্ব চিত্র

টানা স্কুল বন্ধে প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় পথে নামছে পড়ুয়ারা। কোথাও চলছে মিছিল, কোথাও পথ অবরোধও। সোমবারেও এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা দেখল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলা।

Advertisement

অবরোধ জাতীয় সড়ক

আলিপুরদুয়ার: সোমবার শিলবাড়িহাটে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় দু’টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। টানা দু’মাস ছুটির প্রতিবাদে আলিপুরদুয়ার শহরেও এ দিন মিছিল ও বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে বিক্ষোভ দেখায় ফালাকাটার ধনিরামপুরের একটি স্কুলের পড়ুয়ারা।

Advertisement

টানা ছুটিতে পঠন-পাঠনের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিড ডে মিলও। ফলে জেলার পড়ুয়া, অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষকদের একটা অংশের মধ্যেও টানা এই ছুটি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সোমবার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি আন্দোলনে নামে পড়ুয়াদের একাংশ। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ শিলবাড়িহাটে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে শিলবাড়ি হাইস্কুলের পড়ুয়াদের একাংশ। যে অবরোধে কয়েক জন ফালাকাটার যোগেন্দ্রনগর হাইস্কুলের কয়েক জনও সামিল হয় বলে খবর। যদিও যোগেন্দ্রনগর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাননি।

অবরোধে দুর্ভোগ শুরু হলে সোনাপুর ফাঁড়ির পুলিশ আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। এর পর ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় শিক্ষা দফতরের কর্তারা সেখানে গেলে দুপুর আড়াইটে নাগাদ অবরোধ ওঠে৷ শিলবাড়িহাট হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিলেশ রায় বলেন, “যাতে কোনও বিপদ না হয়, তাই পড়ুয়াদের অবরোধে সামিল হতে বারণ করেছিলাম৷ কিন্তু ওরা তা শোনেনি৷”

একই দিনে আলিপুরদুয়ার শহরে এসে একটি মিছিল করে ফালাকাটার ধনিরামপুরের বেগম রাবেয়া খাতুন হাইস্কুলের একদল পড়ুয়া৷ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে মিছিল করে গিয়ে তারা বেশ খানিকক্ষণ বিক্ষোভ দেখায়। একটি একটি স্মারকলিপিও জমা দেয় তারা৷ বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের এক কর্তা বলেন, পড়ুয়াদের দাবিগুলি শিক্ষা দফতরে জানিয়ে দেওয়া হবে৷

প্রতিবাদে পড়ুয়া-অভিভাবক

মেখলিগঞ্জ: গরমের জন্য রাজ্য একটানা প্রায় দু’মাস স্কুল ছুটির বিরুদ্ধে সোমবার ছাত্র সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়া ও অভিভাবকরা মিছিল বের করে মেখলিগঞ্জে। পরে মেখলিগঞ্জে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে স্কুল খোলার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন তাঁরা। মিছিলে উপস্থিত মেখলিগঞ্জ ইন্দিরা গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী রিনা মণ্ডল, মেখলিগঞ্জ হাইস্কুলের ছাত্র জয়দীপ মণ্ডল, চৌরঙ্গি হাইস্কুলের ছাত্র মৃত্যুঞ্জয় সরকার, সৌরভ বিশ্বাস, রোহিত মণ্ডলরা জানায়, এমনিতেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ও লোকসভা ভোটের জন্য পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। তার উপর যে ভাবে একটানা প্রায় দু’মাস স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে পড়ুয়ারা সমস্যা পড়বে। তাই তারা চায়, অবিলম্বে এই ছুটি বাতিল করা হোক। মিছিলে উপস্থিত ফুলমতি রায়, মীনা রায় প্রমুখ অভিভাবকেরা জানান, বর্তমানে মেখলিগঞ্জে যা আবহাওয়া তাতে ভোর রাতে মানুষ চাদর গায়ে দেয়। এখানে দু’মাসের গরমের ছুটি বাড়াবাড়ি। মেখলিগঞ্জ মহকুমা সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক)-এর দফতর থেকে স্মারকপত্রটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

জোড়া অবরোধ

কোচবিহার: টানা প্রায় দুই মাস স্কুল ছুটির নির্দেশিকা বাতিলের দাবিতে পথ অবরোধ হল কোচবিহার সদর মহকুমার দুটি এলাকায়। সোমবার কোচবিহার সদরের পুন্ডিবাড়ি থানার রাজারহাটে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান একদল পড়ুয়া। দেওয়ানহাটেও ওই কারণে অবরোধ হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজারহাটে পুলিশ যায়। দেওয়ানহাটে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন।

এ দিন বেলা প্রায় ১২টা থেকে রাজারহাট এলাকায় ওই অবরোধ শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ চলে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন ওই কোচবিহার-পুন্ডিবাড়ি-শিলিগুড়ি নিত্যযাত্রীরা। ভিন রাজ্যের যাতায়াতকারী ট্রাকও আটকে পড়ে। পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের কর্তারা এলাকায় গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। দাবির বিষয়টি কর্তাদের নজরে আনার আশ্বাস দেওয়া হলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

একই কারণে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার দেওয়ানহাটেও রাস্তা অবরোধ করেন পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা। দুপুর পৌনে দু’টো থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা ওই অবরোধ চলেছে ছাত্র ও অভিভাবক কমিটির ব্যানারে। ফলে কোচবিহার-দিনহাটা ও বলরামপুর রোডে যান চলাচল ব্যাহত হয়। কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন, “রাজারহাট এলাকায় অবরোধের খবর পেয়ে এলাকায় আধিকারিকরা গিয়েছিলেন। যাতায়াত স্বাভাবিক হয়। অন্য ঘটনার কথা জানা নেই।”

চাপ দিল পুলিশ?

তুফানগঞ্জ: সোমবার তুফানগঞ্জ থানার বলরামপুরেও টানা দু’মাস ছুটির প্রতিবাদে পথে নামে পড়ুয়ারা। অভিযোগ, পুলিশ অবরোধ তুলতে হুমকি দেয়। পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তুফানগঞ্জ বলরামপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চৌরঙ্গি মোড়ে সোমবার পথ অবরোধ করে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা, অভিভাবক কমিটি। অবরোধের ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে ঘটনাস্থলে আসে বলরামপুর ফাঁড়ির পুলিশ। অভিযোগ পুলিশ ভয় দেখায় পথ অবরোধ তুলে নিতে বলে। সকাল ১১টা থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ চলে। অভিভাবকরা জানান, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অবরোধ তুলতে বাধ্য হই আমরা।’’

অভিভাবক কমিটির গোপাল চন্দ্র বর্মণ জানান, ‘‘পুলিশ আমাদের অবরোধ তুলে নিতে একপ্রকার বাধ্য করে।’’ তুফানগঞ্জ মহকুমার এসডিপিও জ্যাম ইয়াং জিম্বা জানান, ‘‘পুলিশ কোনও রকম হুমকি বা ভয় দেখায়নি। অনুরোধ করার পরেই অবরোধকারীরা উঠে যান।’’

এক ঘণ্টা অবরোধ

দিনহাটা: একই কারণে সোমবার বেলা ১১ টা নাগাদ পেটলা হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দিনহাটা গোসানিমারি রাজ্য সড়কের পেটলায় পথ অবরোধ করলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলে। খবর পেয়ে দিনহাটা-১ ব্লকের যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অর্পণ মোক্তান ও অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সেখানে যান। ছাত্র-ছাত্রীদের তাঁরা আশ্বাস দেন, তাদের দাবি যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়া হবে। তার পরে বেলা ১২ টা নাগাদ অবরোধ উঠে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন