এনজেপি স্টেশন এলাকায় গন্ডগোলের জেরে পুলিশের সামনে বিক্ষোভ।
টাকা আদায় সহ বিভিন্ন সিণ্ডিকেট থেকে বিপুল আয়ের দখল কার হাতে থাকবে তা নিয়ে শনিবারও তৃণমূলের দু-দলের সংঘর্ষে উত্তাল হল এনজেপি এলাকা। ভাঙচুর হল দোকান। কয়েক ঘন্টার জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল এনেজেপি স্টেশন এলাকা। গোলমালের পর সকাল সাড়ে ন’টার কিছুক্ষণ পর থেকে এলাকার সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় আতঙ্কে। কয়েক ঘন্টা পরে জেলা নেতৃত্বের হ্স্তক্ষেপ খোলার অনুরোধ জানানো হলেও বিকেলের আগে অবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। এলাকা থমথমে হয়েছিল সারাদিনও। বিভিন্ন জায়গায় বাটাম, বাঁশ হাতে নিয়ে জটলা দেখা গিয়েছে সারাদিনই। লাগাতার গোলমাল সামলাতে না পেরে এনজেপি সহ ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি সাংগঠনিক ব্লকের ও এনজেপি ইউনিট কমিটি ভেঙে দিলেন দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি অরূপরতন ঘোষ।
এ ব্যপারে আইএনটিটিইউসির রাজ্য নেত্রী দোলা সেনেরও সম্মতি আছে বলে দোলাদেবী নিজেই জানান। তিনি বলেন, ‘‘দলের সংগঠনের অধীনে থেকে এমন বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। অরূপ আমায় গোটা বিষয়টি জানিয়েছে। আগে তারা সহবত শিখুক। তারপরে নতুন কমিটির চিন্তাভাবনা করব।’’
আপাতত জেলা সভাপতির নেতৃত্বে জেলা কমিটিই সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনা করবে বলে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে আইএনটিটিইউসির রাজ্য নেত্রী দোলা সেন ও পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে বৈঠক করেই নতুন কমিটি তৈরি করা হবে বলে জানান অরূপরতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এনজেপিতে আমাদের নিজেদের দলীয় সংগঠনের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে যা চলছে তা নিন্দনীয়। এটা বরদাস্ত করা যাবে না। আপাতত ট্রেড ইউনিয়নের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ব্লকের সমস্ত কমিটি ভেঙে দেওয়া হল। নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত জেলা কমিটির হাতেই পরিচালনার ভার থাকবে।’’ বিষয়টি ইতিমধ্যেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানানো হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
এদিনও সকাল থেকেই গোলমাল শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। সকাল থেকেই এনজেপি চত্বব্রে দুটি দোকান ভাঙচুর সহ কয়েকজনের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে জয়দীপ নন্দী গোষ্ঠীর লোকেদের বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই গোলমালের জেরে অটো, ট্রাক, বাস বন্ধ হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। আতঙ্কে বন্ধ করে পালিয়ে যান বেশিরভাগ দোকানের দোকানদাররাও। সমস্যায় পড়েন ওই সময়ে স্টেশনে ঢোকা ট্রেনের যাত্রীরা। পরিস্তিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় পৌঁছায়। আশপাশের থানাগুলি থেকেও পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসা হয়। উপস্থিত ছিলেন এডিসি পূর্ব মৃণাল মজুমদার, এসিপি পূর্ব পিনাকী মজুমদার, শিলিগুড়ি, ভক্তিনগর থানার আইসি সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘গোলমালের খবর ছিল। তবে পুলিশ বাহিনী এলাকার উপরে নজর রাখছে। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে।’’ পরে দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে প্রকার দু’ঘন্টা বন্ধ থাকার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শুক্রবার জয়দীপ নন্দী গোষ্ঠীর লোকেদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে প্রসেনজিত রায় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। হামলাকারীরা সিপিএমের লোক বলেও দাবি করেন জয়দীপবাবুরা। তাঁদের নেতৃত্ব দেন প্রসেনজিত বলে অভিযোগ ওঠে। জয়দীপ গোষ্ঠীর তিনজনকে মারধর করায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
শুক্রবার শহরের বাইরে ছিলেন জয়দীপবাবু। এদিন তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘প্রসেনজিত কিছু সিপিএমের লোককে নিয়ে দল ভারী করার চেষ্টা করছেন। এরা সিপিএমের রাজত্বে বিভিন্ন রকম সমাজবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এরা দলে এলে দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। তারাই আমাদের পুরোনো লোকের উপরে হামলা চালাচ্ছে।’’
পক্ষান্তরে, প্রসেনজিতের দাবি, তাঁরা কোনও গোলমাল পাকাচ্ছেন না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘জয়দীপবাবুর লোকেরা ঠিক বলছেন না।’’ তাঁর দাবি, কে আগে কোন দল করত সেটা বিষয় নয়। এখন তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে আসতে চায় তাতে কেন সমস্যা হবে?’’
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।