গুণমান নিয়ে কড়া চা-কর্তা

বিক্রির লাইসেন্স ছাড়াই উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি বটলিফ কারখানা চা তৈরি করছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে টি বোর্ডের কাছে। লাইসেন্স না থাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেই চায়ের গুণমগতমান পরীক্ষা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ।

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০২
Share:

বিক্রির লাইসেন্স ছাড়াই উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি বটলিফ কারখানা চা তৈরি করছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে টি বোর্ডের কাছে। লাইসেন্স না থাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেই চায়ের গুণমগতমান পরীক্ষা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। তার ফলে খোলা বাজারেই বিক্রি হচ্ছে ওই সব কারখানার চা। টি বোর্ডের এক আধিকারিকের বক্তব্য বিক্রির লাইসেন্সহীন ওই সব কারখানার চায়ের উপর কার্যত কোনও সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অরুণকুমার রায় বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

Advertisement

অরুণবাবু বৃহস্পতিবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, যেমন নিয়ম রয়েছে, তা মেনেই চায়ের উৎপাদন করতে হবে। কোনও ক্ষেত্রেই কোনও অন্যথা স্বীকার করা হবে না। তিনি বলেন, ‘‘শুনুন, আপনারা নির্দেশ না মেনে চা তৈরি করতে পারেন। তৈরি করার সময় আমরা কিছু বলব না। তৈরি হয়ে গেলে ধরব আর লাইসেন্স বাতিল করে দেব। কারখানাও বন্ধ করে দেওয়া হবে। গুণগত মান নিয়ে কোন সমঝোতা হবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে আপনাদের।’’ উত্তরায়ণ উপনগরীর একটি হোটেলে তখন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের বটলিফ কারখানার মালিকরা। ছিলেন বেশ কিছু চা বাগান মালিকও। বটলিফ কারখানার মালিকদের সংগঠন নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শাদাতা প্রবীর শীল বলেন, ‘‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছি। তবে আমরা নির্দেশ মেনেই কাজ করব।’’ শুধু শীতকালীল উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা জারি করাই নয়, কাঁচা পাতা ও তৈরি চায়ের গুণগত মান যাচাইয়ে এখন থেকে বিশেষ দল তৈরি করে নজরদারি চালান হবে বলেই জানিয়েছেন অরুণবাবু।

টি বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে তৈরি চা বিক্রির জন্য কারখানা মালিক বা কোম্পানির ‘টি মার্কেটিং কন্ট্রোল অর্ডার’ (টেমকো) লাইসেন্স প্রয়োজন। ওই লাইসেন্স ছাড়া যেমন নিলামে অংশগ্রহণ করা যাবে না তেমনই খোলা বাজারেও চা বিক্রি করা যাবে না। টি বোর্ডের এক আধিকারিক জানিয়েছেন নিয়ম অনুসারে ১০ একর জমি পিছু একটি কারখানা তৈরি হতে পারে। বটলিফ কারখানাগুলির নিজস্ব কোনও বাগান থাকে না।

Advertisement

সেক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে হলে যে সব বাগান থেকে কারখানায় পাতার জোগান হবে তাদের লিখিত অনুমতি জমা দিতে হয়। একই বাগান মালিক একাধিক বটলিফ কারখানার মালিকদের পাতা জোগান দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সেক্ষেত্রে একই এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সংখ্যক বটলিফ কারখানা তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তার ফলে জোগান দেওয়া কাঁচা পাতা এবং তৈরি চায়ের গুণগতমান ঠিক থাকছে না।

প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘লাইসেন্স নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। কাঁচা পাতা জোগানের ভিত্তিতে এলাকা ভাগ করে লাইসেন্স দেওয়া জরুরি।’’

শীতকালীন চা তৈরির উপর ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে টি বোর্ড। ৩১ অক্টোবর নির্দেশিকা দিয়ে বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানিয়ে দিয়েছেন ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে ফার্স্ট ফ্লাশের প্রক্রিয়া শুরুর আগে কোনও বাগান পাতা তুলতে পারবে না। এটাও বলা হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর মরুসুমের শেষ চা তৈরি করতে পারবে যে কোনও চা কারখানা। নির্দেশ অনুসারে কাজ হয়েছে তা জানিয়ে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে কারখানা মালিকদের টি বোর্ডে হলফনামা দিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন