মিড-ডে মিলের গরম খিচুড়ি গায়ে পড়ে এক পড়ুয়া আহত হওয়ায় প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের নারায়ণপুর প্রাথমিক স্কুলে লাইনে দাঁড়িয়ে হুড়োহুড়ি করার সময় প্রধান শিক্ষক লাঠির খোঁচা দেওয়ায় পড়ুয়ার মাথায় গরম খিচুড়ি পড়ে যায় বলে অভিযোগ। বুধবার এই ঘটনার পর ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগ পেয়ে রাতেই প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। আহত ছাত্রীকে শিক্ষকরাই প্রথমে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করান। রাতে তাকে মালদহে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করানো হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ৩২৬ ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। কিন্তু চাঁচলের এসডিপিও অভিষেক মজুমদার বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক সরাসরি ওই ছাত্রীর গায়ে গরম খিচুড়ি ফেলেননি। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।’’
তা সত্ত্বেও কেন জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হল তার কোনও উত্তর মেলেনি।
পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি ঘটনাটি নিয়ে শাসকদলের অন্দরেও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। আহত ছাত্রী এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর আত্মীয় আর প্রধান শিক্ষক বিরোধী শিক্ষা সংগঠনের সদস্য। তাই প্রধান শিক্ষককে ষড়যন্ত্র করে দলের নেতাদের একাংশ ফাঁসিয়েছেন বলে শাসকদলেরই শিক্ষা সংগঠনের একাংশও অভিযোগ তুলেছেন। প্রধান শিক্ষক জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার হলেও চাঁচল মহকুমা আদালত অবশ্য তাঁর জামিন ম়ঞ্জুর করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের সামনেই মনসুরা খাতুন নামে প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া ওই ছাত্রীর বাড়ি। বুধবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা খিচুড়ি বিলি করার সময় তার গায়ে গরম খিচুড়ি পড়ে যায়। শিক্ষকরাই তাকে নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে ছাত্রীর বাবা মহম্মদ হোসেনের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ প্রধান শিক্ষক প্রদীপ দাসকে গ্রেফতার করে। ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, হইচই শুনে প্রধান শিক্ষক এসে মেয়েকে লাঠির খোঁচা দেওয়ায় মাথায় ও শরীরে গরম খিচুড়ি পড়ায় গুরুতর আহত হয় সে।
তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দ্রোনাচার্য বন্দ্যোপাধায় পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। তার সঙ্গে সুর মিলিয়েই শিক্ষা সেলের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক সম্পাদক পান্ডব দাস বলেন, ‘‘ধৃত শিক্ষক আমাদের সংগঠন করেন না। কিন্তু তাকে দলের একাংশ চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। উনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।’’
এবিপিটিএ নেতা গৌতম আচার্য বলেন, ‘‘শাসকদলের একাংশের মদতেই পুলিশ সক্রিয়তা দেখিয়েছে।’’
আহত ছাত্রীর কাকা আলতাফ হোসেন নারায়ণপুর বুথের তৃণমূলের অলিখিত প্রধান।
তাঁর দাবি, প্রধান শিক্ষক লাঠি দিয়ে মারার পরেই যে ভাইঝির মাথায় খিচুড়ি পড়ে গিয়েছিল তা ওর মা দেখেছেন। দলের যারা উল্টো গাইছেন, তারা তৃণমূল নন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা সত্ত্বেও পুলিশের মদতেই উনি জামিন পেয়ে গিয়েছেন।’’
প্রধান শিক্ষক প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তাতে আমি মর্মাহত। কোনও শিক্ষক এমন কাজ করতে পারেন নাকি?’’