Teesta Barrage Project

তিস্তা জলে চিন্তার ছায়া

যে সব অংশে তিস্তা সেচ খাল তৈরি হয়নি, সেখানে কৃষকদের জল চুক্তি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। বাংলাদেশকে জল দিতে হলে ওদলাবাড়ি ব্যারাজ থেকে জল ছাড়তে হবে।

Advertisement

অনির্বাণ রায় 

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

তা হলে সুখার সময়ে আমরা জল পাব তো? যতবারই তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, এই আশঙ্কাই জমাট বেঁধেছে উত্তরবঙ্গের তিস্তা পাড়ে। তিস্তা সেচ খালের জল উত্তরবঙ্গের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে যায় সুখা সময়ে। মূলত বোরো ধান চাষ করতেই এই জল প্রয়োজন। বাংলাদেশও সুখার সময়ে তিস্তার জল চায়। গজলডোবা ব্যারাজে তিস্তার জল আটকে সেচ খালের মাধ্যমে জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার বিস্তীর্ণ জমিতে জল দেওয়া হয়। বাংলাদেশকে জল দিতে হলে ব্যারাজের গেট খুলতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই তিস্তা সেচ প্রকল্পের জন্য ধরে রাখা জলের পরিমাণ কমবে। কৃষকদের আশঙ্কা, তেমন হলে সেচ খালেও জল কমবে।

Advertisement

যে সব অংশে তিস্তা সেচ খাল তৈরি হয়নি, সেখানে কৃষকদের জল চুক্তি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। বাংলাদেশকে জল দিতে হলে ওদলাবাড়ি ব্যারাজ থেকে জল ছাড়তে হবে। ওদলাবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে মেখলিগঞ্জ দিয়ে জল বাংলাদেশে পৌঁছবে। মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা তিস্তা লাগোয়া নিজতরফের কৃষক সুধীর রায় বলেন, “সুখার সময়ে পাম্প বসিয়ে তিস্তা থেকে জল নিই। বাংলাদেশকে জল দিলে জলস্তর অনেকটাই নামবে। আমাদের সমস্যা বাড়বে।” মালবাজারের মৌলানি গ্রাম পঞ্চায়েত তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রস্তাবিত এলাকায় রয়েছে। এই গ্রামে সেচখাল তৈরির কাজ শুরু হয়েও থমকে। গ্রামের প্রাক্তন প্রধান মহাদেব রায় বলেন, “আগে আমাদের গ্রামে সেচখাল তৈরির কাজ শেষ হোক। তার পরে বাংলাদেশকে জল দেওয়ার কথা ভাবা হোক। না হলে সুখার সময়ে কোনও দিনই আমরা জল পাব না।”

সেচখাল যেখানে রয়েছে, সেখানেও আশঙ্কা। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বাহাদুরের বাসিন্দা সিরাজুল হক বলেন, “সুখা সময়ে ক্যানালেও জল বেশি থাকে। এই জল নিয়ে যদি বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে আমরা হয়তো জলই পাব না।”

Advertisement

বৃহস্পতিবার মোদী-হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠকে তিস্তা জল চুক্তি রূপায়ণের প্রসঙ্গ উঠেছে। তাতেই বেড়েছে চিন্তা। বামপন্থী কৃষকদের একাংশের দাবি, তিস্তা সেচ খালের পরিকল্পনা যখন হয়েছিল, তখন থেকে এখন কৃষি পদ্ধতি পাল্টেছে। তিস্তা সেচখালের জলে আশেপাশের জমিতে জল জমে যায়। এতে যেমন বোরো ধানের ক্ষতি হয়। আলু চাষেও সমস্যা হয়। তাই বাংলাদেশকে জল ছাড়লে এ দিকেও জলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হবে, দাবি তাঁদের। সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বাসিন্দা জলপাইগুড়িতে কৃষক সংগঠনের নেতা পীযূষ মিশ্রের কথায়, “জলের ব্যবহার কৃষিতে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। বাংলাদেশকে জল দেওয়া যেতেই পারে। তাতে সেই দেশের সঙ্গে কৃষি বাণিজ্যের সুযোগ বাড়বে।” তৃণমূলের কিসান খেত মজদুর সংগঠনের সভাপতি দুলাল দেবনাথের কথায়, “মমতাকে ছাড়া তিস্তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হলে আমরা আন্দোলন করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন