পৌষে: শীতের সন্ধেয় ঠান্ডায় জবুথবু হয়েই ধান তোলার কাজ বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত
হাড় কাঁপানো উত্তুরে হাওয়া ঢুকে পড়ল উত্তরবঙ্গে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের উপরে। তার টানেই উড়ে এসেছে উত্তুরে হাওয়া, এসেছে মেঘও। দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা ছিল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ঘূর্ণাবর্ত ক্রমশ সরতে শুরু করেছে। তার জেরেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে আগামী কয়েকদিন রাতের তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকবে। সন্ধ্যের পরে এবং সকালের দিকে কুয়াশাও থাকবে। উত্তর সিকিমের বেশ কিছু এলাকায় এ দিন তুষারপাত হয়েছে। পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু রাস্তাও বুধবার বিকেলের পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ দিন দুপুরেই শিলিগুড়ির তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ১৪ ডিগ্রিতে। বিকেলের পরে জলপাইগুড়িতে কনকনে হাওয়া শুরু হয়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী দু’দিনে কনকনে ভাব বাড়বে।
তাপমাত্রার হঠাৎ পতন
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি কমে গিয়েছে। এই হঠাৎ পরিবর্তনকে অস্বাভাবিক বললেও দিনের এই তাপমাত্রা খুব একটা ব্যতিক্রমী নয় বলে দাবি। উত্তরে শীতের তারতম্য পুরোপুরি উত্তুরের হাওয়ায় নির্ভরশীল। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘উত্তরের হাওয়া নিজে থেকে আসতে পারে না, টেনে আনতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন হয় কোনও শক্তিশালী নিম্নচাপ বা শক্তির। এতদিন উল্লেখযোগ্য কোনও পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং ঘুর্ণাবত না থাকায়, তা হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় তৈরি হওয়া ঘুর্ণাবর্তের টানে হু হু করে উত্তুরে হাওয়া ঢুকছে।’’ কনকনে ভাব বেড়েছে। গত মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি থাকলেও আজ তা ১৬ ডিগ্রির কাছাকাছি।
সুনসান রাস্তা
শিলিগুড়ির বিধান রোডের দু’দিকে ফুটপাতে ভোর থেকে একাধিক দোকান, কফিশপ এবং ঠেলাভ্যান কাজের দিনেও ভিড়ে উপচে পড়ে। বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটায় এমনই একটি দোকানে দেখা গেল ভিড় নেই। ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘অনেক চেনামুখকে আজ সকাল থেকে দেখলাম না। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া জবুথবু শীতে হয়তো বাড়ি থেকে বের হননি।’’ মাসের প্রথম সপ্তাহে শিলিগুড়ির পাকুড়তলা এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন দেখা যায়। এ দিন সকাল থেকে সেখানেও লাইন নেই। ব্যাঙ্ক থেকে হাসিমুখে বের হওয়া নিরঞ্জন ঘোষের কথায়, ‘‘প্রতিমাসে পেনশনের টাকা তুলতে এসে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আজ পনেরো মিনিটে হয়ে গেল। যা ঠান্ডা পড়েছে, তাই হয়ত ভিড় কম।’’ সুনসান ছিল মালদহের রাস্তাগুলিও। গত, তিনদিন ধরেই মালদহের তাপমাত্রা ধাপে ধাপে কমছে। এ দিন বুধবার মরসুমের সব থেকে শীতলতম দিন বলে দাবি আবহাওয়া আধিকারিকদের।
নামছে পারদ, চড়ছে দাম
শীত দাপট দেখাতে শুরু করতেই মুখে হাসি ফুটেছে বস্ত্র ব্যবসায়ীদের। হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা সঞ্জয় টাসি বলেন, “প্রায় ৩৫ বছর ধরে আমি মালদহে শীতবস্ত্র বিক্রি করছি। এবারের মতো শীতের খামখেয়ালি কখনও দেখেনি। তাই এ বারে আমাদের কেনাবেচা একেবারে কমে গিয়েছে। তবে বছরের শুরু থেকে যেভাবে শীত পড়েছে আশা করছি এবারে লোকসানের মুখ দেখতে হবে না।” বাসিন্দাদের দাবি তাপমাত্রা কমতেই সুযোগ বুঝে দামও বেড়ে গিয়েছে শীতবস্ত্রের। শিলিগুড়ি হাকিমপাড়ায় ছাড় দিতে শুরু করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ দিন সে সব ছাড় উধাও। উল্টে এক ক্রেতার দাবি, ‘‘এক সপ্তাহে জ্যাকেটের দাম ১০০ টাকা বেড়েছে।’’
• জলপাইগুড়ি— ১১
• শিলিগুড়ি— ১০
• আলিপুরদুয়ার— ১২
• কোচবিহার— ১০
• মালদহ— ১০
• রায়গঞ্জ—১২
• বালুরঘাট—১১
কুয়াশায় ট্রেনের দেরি
কুয়াশার জেরে বুধবার সকালে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির ৩১ ডি জাতীয় সড়কে থমকে যায় পণ্যবাহী ট্রাক। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে কুয়াশায় ঢেকে যায় শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার-আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকা। ফুলবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ি যাওয়ার পথে রাজগঞ্জে পুলিশ গভীর রাতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় ট্রাক যাতায়াত বন্ধ করা হয়।’’ কুয়াশায় পদাতিক সহ বেশ কিছু ট্রেনও দেরিতে চলাচল করে। ভোরের বাসেও ভিড় ছিল খুবই কম।
উড়ানে প্রভাব পড়েনি
বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বাগডোগরায় ২১ জোড়া বিমান নামাওঠা করেছে। বিমানবন্দর অধিকর্তা জানান, সকাল এবং বিকালের ২টি বিমান অল্প কিছু সময়ের দেরি করে ছাড়া আবহাওয়ার কোনও প্রভাব পড়েনি। বিমানবন্দরের অফিসাররা জানান, দুপুর ১২টা নাগাদ এক দফায় রানওয়ের দৃশ্যমানতা ১ হাজার মিটারের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তাতে অনেকেই চিন্তায় পড়েন। কারণ, কমকরে দৃশ্যমানতা ১২০০ মিটারের মতো লেগে থাকে। বেলা বাড়তে পড়ে তা অবশ্য দেড় হাজারও পার করে চলে যায়।