গঙ্গার গ্রাসে মন্দির প্রাচীর

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় বিঘা জমির উপর ৩৫ বছর আগে মন্দিরটি তৈরি হয়। ওই মন্দিরের সঙ্গে গ্রামবাসীদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। গত, জুলাই মাসেও মন্দির থেকে নদীর দুরত্ব ছিল ৩০০ মিটার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই গঙ্গার গর্ভে চলে গিয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরো ভবনটাই। এ বার ধ্বংসের মুখে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটিও। বুধবার সকালেই মন্দিরের সীমানা প্রাচীর গ্রাস করেছে নদী। ফলে ভাঙনের আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে মালদহের কালিয়াচক-৩ ব্লকের পারলালপুর গ্রামের প্রায় চারশো পরিবারের। একই সঙ্গে প্রশাসনের ভুমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের কর্তারা নিয়ম করে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন। তবে ভাঙন রোধে কোন কাজই হচ্ছে না। তাই বসত বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রামের স্কুল, মন্দির সবই চলে যাচ্ছে জলের তলায়। ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

Advertisement

গঙ্গার জলস্তর নামতেই ভাঙন তীব্র হয়েছে মালদহের কালিয়াচক-৩ ব্লকে। মাস খানেক ধরে কালিয়াচক ৩ ব্লকের শোভানগর-পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পার অনুপনগর থেকে পারলালপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে চৌধুরী পাড়া, মণ্ডলপাড়া, ঘোষপাড়া, অনুপনগর, পার অনুপনগর, জিওলমারি প্রভুতি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক বাড়ি গঙ্গা গ্রাস করেছে। ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে স্কুল, কিংবা গ্রামের উঁচু স্থানে ত্রিপল খাটিয়ে সংসার পেতেছেন বহু মানুষ। তবুও ভাঙনের আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না তাঁদের। গত, মঙ্গলবার সকালে পার অনুপনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরো ভবনই নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। ওই স্কুলে ১৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। স্কুলের পর এ বার ভাঙতে শুরু করেছে গ্রামের রাধাগোবিন্দ মন্দিরটিও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় বিঘা জমির উপর ৩৫ বছর আগে মন্দিরটি তৈরি হয়। ওই মন্দিরের সঙ্গে গ্রামবাসীদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। গত, জুলাই মাসেও মন্দির থেকে নদীর দুরত্ব ছিল ৩০০ মিটার। বছর তিনেক আগে নদী ছিল অন্তত ৫০০ মিটার দূরে। ভাঙতে ভাঙতে নদী মন্দিরের সীমানা প্রাচীর গ্রাস করেছে। আর মাত্র ৫০ মিটার গেলেই মন্দির ভবনও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। শুধু মন্দিরই নয়, তলিয়ে যাবে প্রায় চারটি বাড়িও। অনুপনগরের বাসিন্দা পেশায় পার্শ্ব শিক্ষক ধনঞ্জয় রায় বলেন, “দু’সপ্তাহ আগে বাড়ি হারিয়ে মন্দির চত্বরে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন সেই অস্থায়ী ঠিকানাও আর থাকবে কিনা বুঝতে পারছি না।” প্রশাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে গীতারানী বিশ্বাস, সত্যরঞ্জন দাসরা বলেন, “ভাঙন দেখতে প্রশাসনের কর্তারা নিয়ম করে এলাকায় আসছেন। বোট নিয়ে এলাকা ঘুরে দেখছেন। আর ফিরে গিয়েই তাঁরা সব ভুলে যাচ্ছেন। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত ঘর হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে।” জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “শুরু থেকেই ভাঙনরোধের কাজ চলছে। বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোখার চেষ্টা চলছে।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন