মুমূর্ষুর যন্ত্রণা শুনল না কেউ

পান্ডুয়া থেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব মেরেকেটে ১৫ কিলোমিটার। জাতীয় সড়ক যানজট মুক্ত থাকলে এই দূরত্ব পার হতে সময় লাগে মিনিট ২৫। কিন্তু বাসের চালক ও কন্ডাক্টর প্রায় দু’ঘণ্টা পরে ওই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share:

নিথর: বাস থেকে নামানো হচ্ছে আহত আয়ুবকে। নিজস্ব চিত্র

জাতীয় সড়কে গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম ভুটভুটি চালককে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার অবকাশ ছিল না কারও। তাই তাঁকে তুলে দেওয়া হয়েছিল মালদহগামী উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের একটি বাসে। কিন্তু সমস্ত যাত্রীদের নামিয়ে, ডিপো ঘুরে যখন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন আর আয়ুব শেখ (৩৫) এর দেহে প্রাণের স্পন্দন টের পাননি চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার সকালের এই ঘটনার পরই তাঁর মৃত্যুর দায় নিয়ে শুরু হয়ে যায় টানাপড়েন।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, আয়ুব গাজলের পান্ডুয়া গ্রামপঞ্চায়েতের কতুবপুরের বাসিন্দা ছিলেন। এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ভুটভুটি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে মালদহ গামী একটি ছোট গাড়ির ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাঁর ভুটভুটি। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। সেই সময়ই বালুরঘাট থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের একটি বাস মালদহের দিকে আসছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ওই বাসেই তুলে দেন গুরুতর জখম আয়ুব শেখকে।

পান্ডুয়া থেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব মেরেকেটে ১৫ কিলোমিটার। জাতীয় সড়ক যানজট মুক্ত থাকলে এই দূরত্ব পার হতে সময় লাগে মিনিট ২৫। কিন্তু বাসের চালক ও কন্ডাক্টর প্রায় দু’ঘণ্টা পরে ওই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ। তখন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আয়ুবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জানা গিয়েছে, রথবাড়িতেই অধিকাংশ যাত্রী বাস থেকে নেমে যান। আর রথবাড়ির পরেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। কিন্তু দুর্ঘটনায় জখম ব্যক্তিকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে প্রথমে টার্মিনাসে নিয়ে যান বাস চালক। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিপোয়। সেখান থেকে অবশেষে হাসপাতাল। মুমূর্ষুকে বাঁচানোর ন্যূনতম দায়ও কি ছিল না বাসের চালক ও কন্ডাক্টরের। প্রশ্ন আয়ুবের পরিবারের।

Advertisement

বাসের চালক গৌতম রায় মুখ খুলতে না চাইলেও কন্ডাক্টর সমীর বর্মন বলেন, ‘‘স্থানীয় বাসিন্দারা ওঁকে জোর করে আমাদের বাসে তুলে দেয়। তবে অর্ধেক রাস্তাতেই তিনি নিস্তেজ হয়ে যান। তাই আমরা হাসপাতালের বদলে তাঁকে ডিপোতে নিয়ে গিয়েছিলাম।’’

আয়ুব শেখের ভাগ্নে রবিউল শেখ বলেন,‘‘স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহণ কর্মীরা যদি একটু মানবিকতা দেখাতো, তাহলে হয়তো আমার মামা বেঁচে যেত। ঠিক সময়ে মামাকে হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হল না।’’ আশঙ্কাজনক রোগীর সঙ্গে না গিয়ে কী ভাবে দায়সারা হয়ে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসে তাকে তুলে দিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা, সেই প্রশ্নও তুলেছে আয়ুবের পরিবার।

সে দায় অবশ্য নেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য,‘‘ভেবেছিলাম এনবিএসটিসির বাস দ্রুত শহরে পৌঁছাবে। আর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’

রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের এক কর্তা বলেন, ‘‘কখনও মুমূর্ষু রোগীর সঙ্গে কেউ না থাকলে বাসে তোলা যায় না। কারণ বাসে যখন তখন রোগীর কিছু হতেই পারে।’’ তবে এ দিনের ঘটনায় পরিবহণ কর্মীদের কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মালদহ ডিপো-ইন-চার্জ গৌতম ধর। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত ঘটনায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গাড়িটি আটক করা হয়েছে। চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement