বিদ্যুতের শকে খুন চিতাবাঘ, দাবি বনকর্তাদের

রবিবার রাতেই চিতাবাঘের চামড়া উদ্ধার করেছিল বনদফতরের স্পেশ্যাল টাস্কফোর্স। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিল পাঁচজন। সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই বিস্ফোরক তথ্য পেলেন বনকর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৪
Share:

উদ্ধার: চিতাবাঘের চামড়া। নিজস্ব চিত্র

রবিবার রাতেই চিতাবাঘের চামড়া উদ্ধার করেছিল বনদফতরের স্পেশ্যাল টাস্কফোর্স। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিল পাঁচজন। সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই বিস্ফোরক তথ্য পেলেন বনকর্তারা।

Advertisement

বনদফতর সূত্রে খবর, যে চিতাবাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। সেই চিতাবাঘটিকে ফাঁদ পেতে বিদ্যুতের শক দিয়ে মারা হয়েছে। এমনকি প্রাণীটিকে মেরে মাংস খাওয়া হয়েছে বলে বনকর্তাদের দাবি। ধৃতদের জেরা করেই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে বন দফতর সূত্রের খবর। রবিবার রাতে ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ি এলাকা থেকে পাঁচ পাচারকারিকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে তিন জন গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন লাটাগুড়ি, ক্রান্তির বাসিন্দা। বাকি দু’জন নাগরাকাটা এলাকার বাসিন্দা। ঘটনায় একজন ভুটানের নাগরিকও জড়িত রয়েছে বলে সূত্রের খবর। তাঁর খোঁজেও তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের আধিকারিক সঞ্জয় দত্ত।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চার-পাঁচ দিন আগে ডুয়ার্সের হোপ চা বাগানের শ্রমিকদের একাংশ একটি চিতাবাঘকে ফাঁদ পেতে ধরে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে মেরে মাংস খেয়েছেন। যদিও হোপ চা বাগান কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে। বাগানের সিনিয়র সহকারী ম্যানেজার দিবাকর দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা এই বিষয়ে কিছুই জানি না। অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ বাগানের শ্রমিক সংগঠনের নেতা কিশোর গোয়ালা বলেন, ‘‘আমরাও এই বিষয়ে কিছু জানি না।’’ ধৃতদের মধ্যে দু’জন এই বাগানের শ্রমিক। বাগানের ওয়েলফেয়ার অফিসার অশোক কুমার ঝা বলেন, ‘‘আমাদের দু’জন শ্রমিক গ্রেফতার হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু চিতাবাঘের মৃত্যুর ঘটনা জানা নেই।’’

Advertisement

বছর দুয়েক আগেও ডুয়ার্সে একটি পুরুষ চিতাবাঘ মেরে ছাল ও মাংস আলাদা করার ঘটনা ঘটেছিল। বন দফতর খবর পেয়ে যাওয়ায় সে বার ভেস্তে গিয়েছিল পরিকল্পনা। ওই ঘটনায় ডুয়ার্সের একটি চা বাগানের পাঁচজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে বানারহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল বন দফতর। আজও অভিযুক্তরা ফেরার।

জলপাইগুড়ির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিতাবাঘের মাংস খাওয়া কখনও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিভিন্ন রোগের আক্রমণ হতে পারে। এমনকি জলাতঙ্কও হতে পারে।’’ বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা যথেষ্ট সজাগ বলেই তাঁরা দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পেরেছে।’’ টাস্ক ফোর্সের প্রধান তথা বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের বেলাকোবা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘‘সূত্র মারফত খবর আসে দিন কয়েক আগে হোপ চা বাগানে একটি চিতাবাঘ শিকার করে মাংস খাওয়ার পরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে সেই চামড়া বিক্রির চেষ্টা চলছে। ক্রেতা সেজে ওই গ্রুপে ঢুকে ধৃতদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, ১২ লক্ষ টাকা দামে ওই চামড়া বিক্রির রফা হয়। রবিবার রাতে ওদলাবাড়িতে চিতাবাঘের চামড়া নিয়ে হাজির হয় পাঁচ পাচারকারি। প্রাথমিক জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, মাংসের লোভেই ফাঁদ পেতে চিতাবাঘটিকে শিকার করে তারা। এ কাজে সাহায্য করে ভুটানের এক চোরাশিকারি। মাংস খাওয়ার পরে চামড়া বিক্রির কথা মাথায় আসে তাদের। সেই মতো চামড়াটিকে সংরক্ষণ করে রাখতে নুন- হলুদ মাখিয়ে রাখা হয়েছিল। ক্রেতা খুঁজতেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয় বলে ধৃতদের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement