চিকিৎসাধীন: তির বের করার পরে পবিত্র। —নিজস্ব চিত্র।
অস্ত্রোপচার করে তির বের করার পর এখন সুস্থই রয়েছে কুশমণ্ডির স্কুল পড়ুয়া। মালদহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা তার শ্বাসনালীর কাছে আটকে থাকা তিরটি বের করে। ভাই এর সঙ্গে খেলতে গিয়ে সোমবার সকালে গলায় তির বিঁধে গিয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোরের।
সপ্তাহ দুয়েক আগেই এক শিশুর শ্বাসনালীতে আটকে গিয়েছিল হারের লকেট। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে সেটি বার করে। সোমবার রাতে ফের জটিল অস্ত্রোপচারে চিকিৎসকরা সাফল্য পাওয়ায় খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডেপুটি সুপার জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের তৎপরতায় কলকাতার মতো জেলার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও জটিল অস্ত্রোপচার করে সাফল্য মিলছে। এতে জেলার মানুষেরই উপকার।’’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডির ঝাড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় শ্রমিক বিমল মার্ডির দুই ছেলের মধ্যে পবিত্রই বড়ো। স্থানীয় বাবুপাড়া হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সে। তার পরিবারসূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন ভাই শুভদীপের সঙ্গে খেলা করছিল পবিত্র। সেই সময় একটি ইঁদুর দেখতে পেয়ে দু’ভাই বাড়িতে থাকা তির নিয়ে সেটিকে মারতে যায়। আচমকা পা হড়কে পড়ে যাওয়ায় তিরটি পবিত্রর গলায় ঢুকে যায়। এরপরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুশমন্ডি গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচার করে ছাত্রটির গলা থেকে তির বের করা সম্ভব না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করে দেন। রাত আটটা নাগাদ পরিবারের সদস্যরা তিরবিদ্ধ অবস্থায় ওই কিশোরকে নিয়ে হাজির হন মালদহ মেডিক্যালে। হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রবীর কুমার মণ্ডল ও কণিষ্ক চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। তাঁরাই অস্ত্রোপচার করে ওই কিশোরের গলা থেকে তির বের করেন।
চিকিৎসক প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘ওই কিশোরের গলায় শ্বাসনালীর কাছেই প্রায় দু’ইঞ্চি গভীরে তিরটি ঢুকেছিল। সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় তরুণাস্থিতে আটকে রয়েছে তিরটি। আরেকটু ঢুকলেই মূল শিরা ও ধমনী ছুঁয়ে ফেলত তিরটি। অস্ত্রোপচার করে খুব কষ্টে তিরটি বের করা হয়েছে। বেশিক্ষণ সেটি গলায় আটকে থাকলে সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ওই কিশোরের।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটির শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়াও করছে। তবে তরলজাতীয় খাবারই দেওয়া হচ্ছে তাকে। চলতি সপ্তাহেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পবিত্রের বাবা বিমল মার্ডি বলেন, ‘‘গ্রামের হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছিলেন ভালো হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেতে। বাইরের হাসপাতালে নিয়ে গেলে টাকা খরচ হবে ভেবে সরকারি হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করি। চিকিৎসকেরা ভালো চিকিৎসা করায় ছেলে এখন সুস্থ হয়ে উঠছে।’’