সোনা লুঠের তদন্তে নতুন মোড়

বড় সাংগঠনিক মদত কি জড়িত

এ দিন ধৃতদের ১৪ দিনের হেফাজতে নিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সোনা কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসারেরা ছাড়াও অভিযুক্তদের জেরার জন্য সিআইডি, রাজ্য পুলিশের টাক্স ফোর্স এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৯
Share:

সোনা চুরি কাণ্ডে ধৃতরা। —ফাইল চিত্র

শিলিগুড়ির সোনা কাণ্ডের তদন্তে নেমে ধৃত পাঁচ জনের মধ্যে দু’জনের সঙ্গে ওড়িশার, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানায় সক্রিয় মাওবাদী সংগঠন পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ)সঙ্গে যোগাযোগের কিছু তথ্য শিলিগুড়ি পুলিশের হাতে এসেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মোবাইলের ফোন রেকর্ড, ওড়িশার মাওবাদী অধ্যুষিত সুন্দরগড়ে লুকানোর ঘাঁটিগুলি জানার পর অফিসারেরা ওই দাবি করছেন। ইতিমধ্যে ওড়িশা পুলিশকে সব জানানো হয়েছে। তথ্য জানানো হয়েছে রাজ্যের শীর্ষ পুলিশ কর্তাদেরও। তাহলে কি ওই সংগঠনের তহবিলের জন্য ১০ কোটি টাকার সোনা লুঠ হয়েছে, তাও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদেরও। ওড়িশা থেকে ধৃত পাঁচ জনের মধ্যে সম্বলপুরের সনাতন কেরি এবং জাজপুরের ক্ষীরোদ চন্দ্র বল ওই মাওবাদী সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত বলেই পুলিশের দাবি। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজও রবিবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

এ দিন ধৃতদের ১৪ দিনের হেফাজতে নিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সোনা কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসারেরা ছাড়াও অভিযুক্তদের জেরার জন্য সিআইডি, রাজ্য পুলিশের টাক্স ফোর্স এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরে ১০ কোটি টাকার সোনার ডাকাতি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এর পিছনে একটি বিরাট পরিকল্পিত চক্রান্ত এবং সংগঠন রয়েছে। যাদের সঙ্গে পিএলএ-র কিছু যোগাযোগ মিলছে।’’ তিনি জানান, তদন্ত এখনও খুবই প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। এত দিন অভিযুক্ত ১২ জনের দলটির খোঁজ করারই ছিল মূল লক্ষ্য। তাদের ৫ জনকে হাতে পাওয়া গিয়েছে। নানা তথ্য সামনে আসা শুরু করেছে।

পুলিশ এবং গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ১৯৬০ সালের দশক থেকে তেলঙ্গানা আন্দোলনের পর থেকে বিহার, ওড়িশা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পিএলএ সক্রিয়। ২০১০ সালের আগে এরা পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি বলেও পরিচিত ছিল। পরে নতুন রাজ্য ঝাড়খণ্ড, ছত্তীশগড়ে সংগঠনের বিস্তার হয়। ২০০৭ সালে রাজ্যের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া রাজ্যের লালগড়ে সংগঠনের বৈঠকও হয়েছিল। ‘মেন ফোর্স, ‘সেকেন্ডারি ফোর্স এবং ‘বেস ফোর্স’—এই তিন ভাগে ভাগ হয়ে সংগঠনটি কাজ করে চলে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মেন ফোর্স একেবারেই সেনা বাহিনীর কায়দায় তৈরি পিএলএ-র নিজস্ব বাহিনী। সেকেন্ডারি ফোর্স- অস্ত্র সজ্জিত হলেও সংগঠনের দেখভাল, রসদের ব্যবস্থা, তহবিল গড়ে তোলার মতো নানা কাজে জড়িত। আর গ্রামীণ স্তরে মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার থেকে নানা খবর আদানপ্রদানের জন্য বেস ফোর্স কাজ করে।

সোনা কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, ধৃতদের মধ্যে দু’জন সম্ভবত সেকেন্ডারি ফোর্সের হয়ে কাজ করেছেন। ধৃতেরা মোবাইল দোকানের আড়ালে সংগঠনকে তথ্য প্রযুক্তির সরঞ্জাম সরবরাহ করে গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লোক পাঠিয়ে তহবিল গড়ার জন্য টাকা তোলার পরিকল্পনা তৈরি করে পিএলএ।

১২ জন পরপর পরিকল্পনার পর শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের সংস্থাটি থেকে যে ভাবে ভুয়ো নম্বর প্লেটের বাইক নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে দিনে দুপুরে হামলা চালিয়ে পালিয়েছিল, তা সাধারণ ডাকাত বা দুষ্কৃতীদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কারণ, ১০ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৪৮ কেজি সোনা, নগদ টাকা রাতারাতি পরপর ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ডের দিকে নিয়ে পালানোর ক্ষমতা সংগঠনের মদত ছাড়া সম্ভব নাও হতে পারে।

আপাতত শিলিগুড়ি পুলিশ ঠিক করেছে, আর দিন দশেক জেরার, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড থেকে তথ্য যাচাই করার পর রাজ্যগুলিতে যাবেন বিশেষ দলের অফিসারেরা। এ কাজে সাহায্য নেওয়া হবে রাজ্যের নবগঠিত স্পেশাল টাক্স ফোর্সের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন