বাড়িটাই নেই, অজ্ঞান হয়ে গেলেন মনীষা

বাড়িটাই নেই। তার বদলে পড়ে রয়েছে তাল তাল আঠালো মাটি। বাবা, ভাই, বোন কারও খোঁজ নেই। ভয়াবহ ধসের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি গাড়ি ভাড়া নিয়ে শালবাড়ি থেকে মিরিকের টিংলিঙে পৌঁছে এই দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠেন মনীষা শর্মা। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বৃহস্পতিবার সকালে মিরিকের তাঁকে তখন পড়শিরাই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান।

Advertisement

রেজা প্রধান

মিরিক শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:০২
Share:

ত্রাণ শিবিরে মনীষা শর্মা ও তাঁর পরিজনেরা। ছবি: রবিন রাই।

বাড়িটাই নেই। তার বদলে পড়ে রয়েছে তাল তাল আঠালো মাটি। বাবা, ভাই, বোন কারও খোঁজ নেই।
ভয়াবহ ধসের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি গাড়ি ভাড়া নিয়ে শালবাড়ি থেকে মিরিকের টিংলিঙে পৌঁছে এই দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠেন মনীষা শর্মা। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বৃহস্পতিবার সকালে মিরিকের তাঁকে তখন পড়শিরাই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান। আপাতত সুস্থ হলেও তিনি রয়েছেন টিংলিঙের ত্রাণ শিবিরে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও দুই বোন মায়া ও সঞ্জনা। ওঁরা তিন জনই টিংলিঙের বড় হয়েছেন। বিয়ের পরে এখন নানা এলাকায় থাকেন। ধসের খবর পেয়ে বাড়িতে ফিরে দেখেন বাবা-মা, দুই বোন, ভগ্নিপতি, ভাইঝি সহ পরিবারের ১১ জনই ঘুমের মধ্যে যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন। যাঁদের ৫ জনের দেহ মিলেছে। ৬ জনের কোনও হদিস বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেলেনি। তাই তিন বোন একে অন্যকে জড়িয়ে মাঝে মধ্যেই ফুঁপিয়ে উঠছেন।
মায়াই সব থেকে বড়। দুই বোনকে নিয়ে এখন টিংলিঙ প্রাথমিক স্কুলের ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন তিনি। মায়াদেবী বললেন, ‘‘আমাদের বাড়িটা ছিল সাজানো-গোছানো। মাঝখানে একচিলতে উঠোন। দু’দিকে দু’টি বাড়ি। এক দিকে বাবা থাকতেন। অন্য দিকে ভাই থাকত। আমরা বোনেরা মাঝে মধ্যে এসে থাকতাম। ধসের খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখি দু’টি বাড়ির একটাও নেই। পাহাড়ের নীচে কোথায় যে সব কিছু চাপা পড়ে গিয়েছে কে জানে!’’

Advertisement

পরিবারের বাকিদের দেহ কবে মিলবে, তা নিয়ে কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। কারণ, ধসে বাড়ি তলিয়ে কয়েকশো ফুট নীচে গিয়ে মিশেছে। সেখানে নেমে খোঁড়াখুঁড়ি করে দেহ উদ্ধার করার মতো পরিকাঠামো এখনও পাহাড়ে নেই।

মায়া তবু শোক কিছুটা সামলেছেন। তাঁর বোন মনীষা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন। মাঝে মধ্যেই আর্তনাদ করে উঠছেন। তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমার বাবা, ভাই, ছোট্ট ৯ বছরের ভাইঝি কোথায় গেল! ওঁদের খুঁজে এনে দাও।’’ তাঁকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ত্রাণ শিবিরের অন্যরা। ছোট বোন সঞ্জনাও কেঁদে চলেছেন। তিনিও শ্বশুরবাড়ি থেকে ছুটে এসেছেন। তিনি বললেন, ‘‘আমি ৭ মাস ধরে বাড়িতে আসতে পারিনি। বাবা, ভাইকে শেষবারের মতো চোখে দেখতে পেলাম না।’’

Advertisement

ত্রাণ শিবিরে খাবার দেওয়া হলেও সে দিকে যেন কারও মন নেই। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে ফের নতুন করে ঘরদোর তৈরি করতে পারবেন সেটা ভেবেই সকলে উদ্বিগ্ন। মমতা থাপা টিংলিংয়ের লিম্বু গাঁও থেকে ত্রাণ শিবিরে এসেছেন। তাঁদের বাড়ি ভাঙেনি। কিন্তু ধসে বিধ্বস্ত এলাকায় ঘরদোর হওয়ায় বিপদ রয়েছে। সে জন্য আপাতত ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। দিনের বেলা গিয়ে দূর থেকে ঘরদোর দেখছেন। ধস সারিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো অন্যত্র ঘর বাঁধার জায়গায় খুঁজতে হবে তাঁদের। মমতা বললেন, ‘‘জানি না কী হবে! প্রশাসন সহযোগিতা না করলে কী যে হবে জানি না!’’ এ টুকু বলেই ওড়না মুখে চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলেন তিনিও।

টিংলিঙের অদূরে সৌরিনি কমিউনিটি হলেও ত্রাণ শিবিরে শুধুই কান্নার রোল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন