ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত আরএসপি সমর্থককে কোপানোর অভিযোগে তিন তৃণমূল কর্মী গ্রেফতার হল শিলিগুড়িতে। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানা এলাকার গুরুঙ্গবস্তি এলাকায়। রবিবার সকালে অভিযুক্ত তিন জনকে তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গুরুতর জখম রাজেশ পূর্বের ঘাড়ে, বুকে ও পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে। ধৃতেরা বাবা ও দুই ছেলে। তাদের নাম ভাগবত রায়, অর্জুন ও রাজা। সুনীল সিংহ নামে আরও এক জনকে খোঁজা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সে তৃণমূলের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সম্পাদক। যদিও এদিন সকালে তাকে গুরুঙ্গবস্তি এলাকাতেই ঘুরতে দেখা গিয়েছে।
ঘটনার পরে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে দফায় দফায় প্রথমে আরএসপি সমর্থকরা দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে ও পরে তৃণমূল সমর্থকরা ধৃতদের মুক্তির দাবিতে প্রধাননগর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। গোটা ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ও শিলিগুড়ির মেয়র তথা শিলিগুড়ি কেন্দ্রের বাম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
গৌতমবাবু বলেন, ‘‘কেউ যদি কোনও অপরাধ করে থাকে, পুলিশ তার ব্যবস্থা নেবে।’’ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান অশোকবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘ভযঙ্কর ঘটনা। এমন ঘটনা শিলিগুড়িতে ঘটে না। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি। শান্তিুপূর্ণ ভোটের জন্যই এটা প্রয়োজন।’’ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এই এলাকাকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন ডিওয়াইএফআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সৌরাশিস রায়। এই দাবি জানিয়ে তাঁরা মহকুমাশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
রবিবার সকাল থেকে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গুরুঙ্গবস্তি এলাকায় ছোট ছোট জটলা দেখা গিয়েছে সারা দিনই। পুলিশ জানিয়েছে, পুরনো কোনও বিবাদের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর তথা শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র আরএসপির রামভজন মাহাতো বা তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি শ্যামসুন্দর সিংহ এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই দেখছেন। রামভজনবাবুর দাবি, ‘‘তাঁদের সমর্থক রাজেশ পূর্বে রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পুরনো বিবাদ ছিলই। কিন্তু ভোটের আগে এলাকায় আরএসপির কর্তৃত্ব খর্ব করতে সেই বিবাদের সূত্র ধরেই তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে এলাকার লোকেরা ভয় পেয়ে যায়।’’ যদিও অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অন্যতম অভিযুক্ত সুনীল সিংহের দাদা তথা তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি শ্যামসুন্দরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাই বা বাকি অভিযুক্তরা কেউই এ কাজ করেনি। ওই ব্যক্তি কী ভাবে, কোথায় জখম হয়েছে তা জানি না। তবে আমাদের কর্মীদের বিনা কারণে গ্রেফতার
করেছে পুলিশ।’’
জখমের ছোট ভাই রাজু বলেন, ‘‘গত সরস্বতী পুজোর সময়ে গভীর রাতে চেঁচামেচি করছিল ধৃত রাজা ও অর্জুন। তাদের বারণ করে দাদা। তারা না শুনলে দাদা তাদের মণ্ডপ ভেঙে দেয়। এ নিয়ে গোলমাল বাঁধে দু’পক্ষের। তা পরে মিটেও যায়। কিন্তু তারপরে আরও কোনও ঝামেল হয়নি। হঠাৎ এই ঘটনা।’’ যদিও ধৃত ভাগবতের স্ত্রী আশাদেবীর দাবি, ‘‘আমার স্বামী ও দুই ছেলে সারা রাত ঘরেই ছিল। হঠাৎ ভোরের দিকে পুলিশ গিয়ে তাদের তুলে নিয়ে যায়। পরে ঘটনা শুনেছি।’’