টোটোয় চালক গৌতম দেব।
জোরকদমে ভোট-প্রচার শুরু হয়ে গেল ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায়। বুধবার সকাল থেকেই সিপিএম প্রার্থী তথা শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ সিংহ দলের কর্মী অনুগামীদের নিয়ে স্টেট গেস্ট হাউস লাগোয়া প্রকাশনগর, নিউ প্রকাশ নগরে বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচারে নামেন। কখন বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে, কখনও রাস্তার মোড়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে প্রচার সারেন।
বেলা সাড়ে ন’টা নাগাদ ইস্টার্ন বাইপাসে বাণেশ্বর মোড় থেকে প্রচার মিছিল শুরু করেন তৃণমূল প্রার্থী তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। কখনও বাসিন্দাদের কাছে আশীর্বাদ চেয়েছেন, কখনও মিছিল থেকে বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়েছেন। আবার কখনও টোটোতে চালকের আসনে বসে বাসিন্দাদের মধ্যে ভোটের প্রচার সেরেছেন। মিছিল শেষে দলীয় কর্মীর বাড়িতে বসে চায়ের আড্ডায় কর্মীদের প্রচার কাজে উজ্জীবিত করেছেন।
শাসক-বিরোধী তরজাও চলছে। প্রচারের ফাঁকেই সিপিএম প্রার্থী দিলীপবাবু অভিযোগ করেন, উন্নয়নের কোটি কোটি টাকার তথ্য দিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবারও ভোটে জেতার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেছেন। কয়েকটা রাস্তা, কালভার্ট এবং সেতু করেই উন্নয়নের ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন মন্ত্রী। ৪০০-৫০০ কোটি না কি খরচ করেছেন বলছেন। আর বড় কাজ বলতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর জন্য উত্তরকন্যা তৈরি করেছেন। সাধারণ মানুষের তো কিছুই হয়নি।
দিলীপবাবুর প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে চাননি গৌতমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘দিলীপবাবুর প্রশ্ন নিয়ে একটা কোনও কথা বলতে চাই না।’’ তবে, এলাকার অনেক জাযগায় রাস্তাঘাট, নিকাশি, পথবাতির সমস্যা নিয়ে তাঁর জবাব, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে এতগুলি বছর ধরে উন্নয়ন না হওয়ায় এই সমস্ত এলাকার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা একদিনে যাবে না। এলাকায় ওই সমস্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্ননয় কাজ হচ্ছে। অভিষ্যতে সেই কাজ আরও এগিয়ে নেওয়া হবে।’’
ভোটারদের কাছে প্রচারে দিলীপ সিংহ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
গতবারও পরিবর্তনের ভোটে গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন দিলীপবাবু। তিনি ১১ হাজারের সামান্য কিছু ভোটে হারেন। দিলীপবাবু’র দাবি, ‘‘গত পাঁচ বছরে এলাকারয় একটি হাইস্কুল কলেজ, হাসপাতাল তৈরি হয়নি। কোনও কারখানা হয়নি। মানুষ জমির পাট্টা পায়নি। রেশন কার্ডে গোলমাল হয়েছে। কটা লোক চাকরি পেয়েছে? আর সব থেকে বড় বিষয়, প্রশাসনিক কাজের জন্য এখনও এলাকার সাধারণ মানুষকে জলপাইগুড়ি যেতে হয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থার আশ্বাস তো মন্ত্রী গতবার দিয়েছিলেন, কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে।’’
এ দিন উত্তর এবং দক্ষিণ একতিয়াশাল এলাকার বিভিন্ন গলি রাস্তা দিয়ে মিছিল হয়। একতিয়াশাল বাজার, ইসকন মন্দির রোড় হয়ে মিছিল হয়েছে। ওই সমস্ত জায়গার একাংশে এখনও রাস্তাঘাট নিকাশি ব্যবস্থা মোটেই ভাল নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। এমনকী পথবাতিও নেই অনেক জায়গায়। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে এ দিন গৌতমবাবু বলেছেন, ‘‘উত্তরকন্যার মতো মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় হয়েছে। ওটাই তো এই এলাকার মানুষদের কাছে সব চেয়ে বড় প্রশাসনিক ব্যবস্থা। তা ছাড়া বাসিন্দাদের যাতে জমিজমার কাছে জলপাইগুড়ি না যেতে হয় সে জন্য আলাদা রেজিস্ট্রি অফিসও চালু হয়েছে। এলাকার মানুষ এই সমস্ত ব্যবস্থা থেকে উপকার পাবেন।’’
এলাকার সিপিএম নেতাদের দাবি, ২০১১-এর তুলনায় বিধানসভার ছবিটা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। সিপিএম আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ২০১৩ সালে এলাকার জেলা পরিষদ আসনে সিপিএম প্রার্থী জানকী রায় সাড়ে ৩ হাজার ভোটে জিতেছেন। বিধানসভার মধ্যে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার ১৪টি ওয়ার্ডের ৯টি ওয়ার্ডই ২০১৫ সালে সিপিএম জিতেছে। আর পঞ্চায়েত নিবার্চনে বিধানসভার থাকায় চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে দুটিতে তৃণমূল জিতেছিল। বাকি দুটির একটিতে সিপিএম এবং আরেকটি টাই হওয়ায় টসের মাধ্যমে সিপিএমের প্রধান হন।
সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘জবরদখল করে আমাদের পঞ্চায়েত দুটি দখল করে তৃণমূল। এত কাজের দাবি করলেও ফল কী হয়েছে বাস্তবে, পুরসভায় তা ওঁরা টের পেয়েছেন।’’ তৃণমূলের দাবি, নিজের কেন্দ্রকে গৌতমবাবু উন্নয়নের মডেল হিসাবে তুলে ধরছেন। ‘বেঙ্গল সাফারি’ পার্ক থেকে ‘উত্তরকন্যা’, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সেতু তৈরি-সহ নানা কাজ হয়েছে। গৌতমবাবু জানান, দেশের মধ্যেই এই এলাকাকে উন্নয়নের নিরিখে তিনি মডেল হিসাবে গড়ে তুলছেন।