ইংরেজবাজারে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থী তালিকায় চমক। খানিক রদবদল। তা দিয়েই কংগ্রেসের ‘গড়’ বলে পরিচিত মালদহে ঘাসফুল ফোটানোর আশা দেখছে তৃণমূল।
এ বারে মালদহের ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকায় বেশ কিছু বদল হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় তৃণমূল হবিবপুর, মানিকচক এবং মোথাবাড়িতে প্রার্থী দিলেও মাত্র একটি আসনে জয়ী হয়েছিল। সেই আসনে জয়ী হয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন সাবিত্রী মিত্র। এরপর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তিনি তৃণমূলের টিকিটে উপনির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হন। পরবর্তীতে গাজল ও সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক সুশীলচন্দ্র রায় এবং আবু নাসের খান চৌধুরী তৃণমূলে যোগ দেন। মাস চারেক আগে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তাজমুল হোসেন যোগ দেন তৃণমূলে। জেলার এই পাঁচ বিধায়কই নিজেদের বিধানসভা কেন্দ্রে ফের প্রার্থী হয়েছেন।
চমক রয়েছে জেলার বাকি সাতটি আসনে। দল সূত্রে খবর, জেলার ওইসাতটি আসনে প্রার্থী হতে চেয়ে দলের একাধিক জেলা নেতৃত্বদের মধ্যে আগেই জোর তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ওই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে ৫০ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল।
বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন ২০১৪-তে দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হন। সেই ভোটে হারের পর থেকে তিনি নিজেই বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্রে জনসংযোগ বাড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। তবে এ বারের বিধানসভায় তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে উত্তর মালদহ কেন্দ্রের মালতীপুরে। আর বৈষ্ণবনগরে প্রার্থী করা হয়েছে আইনজীবী অসিতবরণ বসুকে, যিনি রতুয়া থেকে বিগত বিধানসভায় কংগ্রেস প্রাথী হয়ে বিপুল ভোটে হেরেছিলেন। মোয়াজ্জেমের কেন্দ্র মালতীপুরে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ধরে নিয়ে কার্যত প্রচারে নেমে পড়েছিলেন যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা ইংরেজবাজারের কাউন্সিলর অম্লান ভাদুড়ি। তবে তাঁকে এ বার দল প্রার্থী করেনি।
এমনই ছবি মোথাবাড়ি কেন্দ্রেও। সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে মহম্মদ নজরুল ইসলামকে। এই আসনেও প্রার্থী হওয়ার জন্য তৃণমূলের একাধিক দাবিদার ছিল বলে দল সূত্রে খবর। তৃণমূলের জেলা সম্পাদক তথা পুরসভার কাউন্সিলর আশিস কুণ্ডু নিজেই উদ্যোগী হয়ে কংগ্রেসের দখলে থাকা গঙ্গাপ্রসাদ পঞ্চায়েত ভেঙে দিয়ে বোর্ড গঠন করান বলে বিরোধীদের অভিযোগ। বিরোধী দলের পঞ্চায়েত সদস্যদের ভাঙিয়ে নিজের বাড়িতে রেখে গাড়িতে করে পঞ্চায়েতেও তিনি নিয়ে যান বলে তখন জোর অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। একই সঙ্গে কর্মীদের সঙ্গে ঘুরে মিটিংও করতে শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। ওই মোথাবাড়ি কেন্দ্রেই তৃণমূলের আরেক নেতা রামপ্রবেশ মন্ডল ও তাঁর ছেলে যুব তৃণমূলের জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ মন্ডল মাস তিনেক ধরে ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন। বুথে বুথে পদযাত্রাও শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। প্রার্থী তালিকায় তাঁদের নাম নেই দেখে কিছুটা হলেও হতাশ তাঁদের অনুগামীরাও। যদিও তাঁরা বলছেন, দিদি যাঁকে প্রার্থী করবেন, তাঁকেই আমরা মেনে নেব।
রতুয়ায় গনিখানের পরিবারের সদস্য শেহনাজ কাদরি এবং চাঁচলের সৌমিত্র রায়কে নিয়েও বিতর্ক রয়েছে বলে দলের একাংশের দাবি। তাঁদের কথায়, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ থাকায় গত লোকসভা নির্বাচনে জেলাতে তৃণমূলে ফল খারাপ হয়েছিল। উত্তর মালদহ কেন্দ্রে ছিল তৃতীয় এবং দক্ষিণ মালদহে চতুর্থ স্থানে ছিল তৃণমূল।’’ তাই এ বারের বিধানসভাতেও দ্বন্দ্বের কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলে একটা আশঙ্কা রয়েছে। প্রার্থী হতে না পারা নেতারা কিন্তু জানিয়েছেন, ‘‘আমরা দলের কর্মী হিসেবে বুথে বুথে কাজ করেছি। নির্বাচনেও তা করব।’’ তা যাতে হয়, সেই আশাতেই রয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
তবে দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভের কথা মানতে চাননি জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। তিনি আমাদের যেখানে দাঁড় করাবেন, সেখান থেকেই লড়ব আমরা। আর জেলার প্রার্থী নিয়ে কর্মী-সমর্থকেরা খুশি। ফলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।’’