ফাইল চিত্র।
ইসলামপুরে বিধায়ক থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত, সবই তৃণমূলের দখলে। কিন্তু দাড়িভিট এলাকায় চার গ্রাম সংসদ সদস্য বিজেপির। ফলে দাড়িভিটে প্রতি পদে তৃণমূলকে টেক্কা দিচ্ছে তারা। নিহত রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণের বাবাদের গোপনে দিল্লি নিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়া থেকে দু’জনের মায়েদের সামনে রেখে স্কুলের সামনে ধর্না আন্দোলন— সবই সাফল্যের সঙ্গে করেছে বিজেপি। শাসকের উপরে চাপ বাড়াতে ৬ অক্টোবর ইসলামপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডাকে সামনে রেখে সভা করারও কথা। জেলা নেতারা এমনকি এ-ও বলছেন যে, দাড়িভিটই হবে তৃণমূলের নন্দীগ্রাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে মরিয়া তৃণমূল ৪ অক্টোবরই দলীয় পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীকে দাড়িভিটে নিয়ে যেতে চাইছে। একই সঙ্গে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার রাস্তাও খুলতে চাইছেন স্থানীয় নেতারা।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, দাড়িভিট কাণ্ডে পুলিশ দোষী কিনা, তা তদন্ত সাপেক্ষ ঠিকই, কিন্তু তাতে নিহতদের পরিবারের কাছে পৌঁছতে বাধা কী ছিল? বরং বহিরাগত তত্ত্বকে সামনে রেখে প্রশাসন দাবি করতেই পারত, নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। উদাহরণ হিসেবে জখম কনস্টেবল পরিমল অধিকারীর ঘটনাকেও সামনে রাখা যেত। তৃণমূলের আর একটি অংশের বক্তব্য, পুলিশ দোষী কি নির্দোষ, সেটা তদন্ত সাপেক্ষ বলেও কোনও কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেওয়া যেত।
কিন্তু এর কোনওটিই তৃণমূল করেনি। সেই জায়গাটা উল্টে বিজেপি দখল করেছে। দুই তরুণের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে তারা। সেখানে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও তৃণমূলের কোনও নেতা-মন্ত্রী মৃতদের বাড়ি যাননি। পরে সমালোচনা শুরু হলে দাড়িভিটে গিয়ে উল্টে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি, বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবাল। মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে তাঁদের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহতের পরিবার। মন্ত্রী এবং বিধায়কের দাবি, ‘‘পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। ওই সময় গেলে পরিস্থিতি আরও অন্যরকম হতে পারত। মৃতদের পরিবারকে সমস্ত সাহায্যের কথাও জানানো হয়েছে।’’ কানাইয়ালাল বলেন, ‘‘দু’জন মারা গিয়েছেন। কারা মারলেন, তদন্ত করে তা বার করতে হবে।’’
শনিবার রাতে মৃত দুই তরুণের বাবাকে গ্রাম থেকে বিজেপি নেতাদের দিল্লি রওনা হওয়ার বিষয়টি তৃণমূল টের পায়নি। সোমবার স্কুল খোলানোর বৈঠকও শেষ অবধি করতে পারেনি পরিচালন সমিতি। উপরন্তু, তৃণমূলের আলোচনাতেই শোনা যাচ্ছে, ২৬ সেপ্টেম্বর বন্ধের দিন পরিবহণমন্ত্রী ইসলামপুরে এলে নিহতদের পরিবারের লোকদের বুঝিয়েসুজিয়ে তাঁর কাছে নিতে পারেননি তৃণমূল নেতারা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি, করিম চৌধুরী মন্ত্রী থাকার সময়ে এলাকায় তৃণমূলের যতটা নিয়ন্ত্রণ ছিল, এখন আর তা নেই। তিনি আলাদা দল গঠন করার পরে সেই জায়গাটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট রব্বানি। কিন্তু এখনও তিনি সফল হননি।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। বিজেপি সেটা নিয়ে রাজনীতি করছে। বিজেপি এবং আরএসএসের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীরা গুলি করেছে। বাসিন্দাদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ রয়েছে।’’ নিহত দুই তরুণের বাবাকে দিল্লি নিয়ে গেলেও তৃণমূল টের পেল না কেন? অমলবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি এ সব করছে। সব স্পষ্ট হবে। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ৪ অক্টোবর দাড়িভিট যাবেন।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘নন্দীগ্রাম নিয়ে সিপিএমের মুখ পুড়েছে। আর দাড়িভিট নিয়ে তৃণমূলের। পুলিশের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠলেও কোনও পুলিশ অফিসার সাসপেন্ড পর্যন্ত হননি।’’