Abhishek Banerjee

গ্রামবাংলাকে ভাতে মারছে বিজেপি! পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেক-কণ্ঠে স্পষ্ট তৃণমূলের রাজনৈতিক লাইন

আলিপুরদুয়ারের সভামঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিজেপি আসলে বিধানসভা ভোটে হারের যন্ত্রণা থেকেই বাংলাকে বঞ্চনা করছে। ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ করছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৪১
Share:

আলিপুরদুয়ার থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

বিধানসভা ভোটে হেরে বিজেপি গ্রামবাংলাকে তাদের প্রাপ্য থেকে ‘বঞ্চিত’ করছে— আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে এই হবে শাসক তৃণমূলের ‘রাজনৈতিক লাইন’। শনিবার উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার থেকে তাঁর পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শুরু করে সেটাই বুঝিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এপ্রিল মাসে অভিষেকের আরও চারটি সভা করার কথা। প্রত্যেকটি সভাতেই তিনি এই লাইনেই আক্রমণ আরও জোরালো করবেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।

Advertisement

বস্তুত, তৃণমূল যে এই মর্মে একটি ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করতে চলেছে, তার ইঙ্গিত বেশ কিছু দিন ধরেই পাওয়া যাচ্ছিল। শনিবার প্রকাশ্য সভায় অভিষেকের বক্তব্যে তা এক প্রকার বৈধতা পেল।

কিছু দিন আগে রাজ্যের বকেয়ার দাবি জানাতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের দফতরে দেখা করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক। সঙ্গে ছিলেন দলের সাংসদেরাও। কিন্তু মন্ত্রীর দেখা পাওয়া যায়নি। দফতরের সচিব বলেছিলেন, মন্ত্রী বিহারে রয়েছেন। তিনি দিল্লিতে নেই। মন্ত্রীর সচিবকে অভিষেক বলেছিলেন, যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের গ্রেফতার করা হোক। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দরকার হলে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। কিন্তু গ্রামের গরিব মানুষের টাকা যেন আটকে না-রাখা হয়। সচিবের সঙ্গে অভিষেকের কথোপকথনের সেই ভিডিয়ো সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে এটা বোঝা যায় যে, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার গ্রামবাংলার মানুষকে বঞ্চিত করছে। সেই কথোপকথনের সময়েই কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জের সুরে ১৫ দিন সময় দিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। বলেছিলেন, ‘অন্য পথ’ অবলম্বন করবেন।

Advertisement

শনিবার আলিপুরদুয়ারের জনসভার আগে শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজকে আরও এক বার আক্রমণ করে তৃণমূল। তৃণমূলের সাংসদেরা চিঠি লিখে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অসত্যভাষণ’ করার অভিযোগ আনেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, যে দিন অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের সাংসদেরা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সে দিন তিনি বিহারে নয়, দিল্লিতেই ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী তৃণমূলের সাংসদদের সঙ্গে দেখা করেননি।

তার পরেই শনিবার অভিষেক বিজেপিকে লক্ষ্য করে মোক্ষম অস্ত্রটি ছুড়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বাংলার মানুষকে ‘ভাতে মারতে চায়’ বিজেপি। পাশাপাশিই জানিয়েছেন, ১০০ দিনের কাজের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা তিনি দিল্লি থেকে ‘ছিনিয়ে’ আনবেনই!

গ্রামীণ অর্থনীতি, প্রান্তিক মানুষদের রুজিরোজগার অনেকাংশেই নির্ভর করে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, গ্রামীণ সড়ক যোজনা ইত্যাদি প্রকল্পের উপর। ১০০ দিনের কাজের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার ওই খাতে অর্থব্যয়ের কোনও স্পষ্ট হিসেব দেয়নি। সে কারণেই ওই অর্থ আটকে রাখা হয়েছে। একই বক্তব্য রাজ্য বিজেপিরও। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও সেই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি লিখেছেন। যে চিঠিকে ‘হাতিয়ার’ করেছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘‘এমন বিরোধী দলনেতা দেখেছেন, যিনি কেন্দ্রকে চিঠি লিখে বলছেন যে, বাংলার মানুষের অধিকারের টাকা বন্ধ করে দিন!’’

আলিপুরদুয়ারের সভার প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তৃতার অধিকাংশ সময়টাই অভিষেক নিয়েছেন ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র কথা বলে। বকেয়া পাওনার দাবিতে ইতিমধ্যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কলকাতার রেড রোডে দু’দিন ধর্না দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, বকেয়া না দিলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দিল্লি গিয়ে ধর্না দেবেন। অভিষেক জানিয়েছেন আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে এ নিয়ে ‘কর্মসূচি’র কথা। বাংলার সমস্ত তৃণমূল ব্লক সভাপতিকে অভিষেকের নির্দেশ, ১০০ দিনের কাজ করেও যাঁরা টাকা পাননি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে এমন মানুষদের সই সংগ্রহ করে আনতে হবে। সেই সব সই সংবলিত চিঠি তিনি নিজে পৌঁছে দেবেন প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর দফতরে। অভিষেক বলেন, ‘‘আমাকে আপনারা এক কোটি সই দিন। আমি ১০০ দিনের টাকা দিল্লির বুক থেকে ছিনিয়ে আনবই।’’ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সচিবকে যা বলেছিলেন, জনসভাতেও সেই কথাই আবার বলেছেন অভিষেক, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে বলব— আপনারা তো কথায় কথায় ইডি-সিবিআই দেখান! কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারটাই চলছে ইডি-সিবিআইয়ের জোরে। ক্ষমতা থাকলে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই করুন। কেউ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকলে তাঁর গলা ধরে জেলে ঢোকান। কিন্তু সাধারণ মানুষের টাকা আপনাদের ছাড়তে হবে।’’

ওই দাবির কথা বলতে গিয়ে আরও এক বার গিরিরাজকে নিশানা করেছেন অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সে দিন তাঁর এবং তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে দেখা করেননি। কারণ, মন্ত্রীকে তিনি যে প্রশ্ন করতেন, তার উত্তর মন্ত্রীর জানা ছিল না।

এর আগে শহিদ মিনারের সমাবেশ থেকেও রাজ্যের বকেয়া পাওনা নিয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক। দাবি করেছিলেন, মোট ১০৬টি প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সব মিলিয়ে মোট ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। এই তালিকায় রাজ্যের সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে। ১০০ দিনের কাজের টাকা গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। এ ছাড়া আবাস, সড়ক যোজনার মতো গ্রামীণ উন্নয়নের টাকা দেওয়াও বন্ধ রেখেছে গিরিরাজের মন্ত্রক। আলিপুরদুয়ারে অভিষেকের অভিযোগ, বিজেপি আসলে বিধানসভা ভোটে হারের যন্ত্রণা থেকেই বাংলাকে বঞ্চনা করছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। তাই বিরোধী রাজ্যের সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র বঞ্চিত করছে। তাঁর কথায়, ‘‘আপনাদের (বিজেপি) লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। লড়াই রাজনৈতিক ভাবে করুন। কিন্তু আপনারা যদি বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চান, আমরা ছাড়ব না। যত দূর আন্দোলন করতে হয় করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন