স্বামীর-মৃত্যু: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন লতিকা মহালদার। নিজস্ব চিত্র
কীর্তনের আসরে মাইকের শব্দ কমানো নিয়ে বচসার জেরে তৃণমূলের এক কর্মীকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল। মালদহের পুথুরিয়া থানার সিমলা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। নিহতের নাম সনাতন মহালদার (৩০)। সনাতনকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন।
বিজেপির কর্মী বলে পরিচিত চার জনকে পুলিশ রাতেই গ্রেফতার করেছে। তৃণমূল নেতা তথা দলের রতুয়ার পরিদর্শক দেবপ্রিয় রায় বলেন, ‘‘পরিষ্কার রাজনৈতিক কারণেই পরিকল্পনা করে সনাতনকে খুন করেছেন বিজেপির কর্মীরা।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি সঞ্জিত মিশ্রের অবশ্য দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। ঘটনাচক্রে নিহত ও অভিযুক্তরা দু’টি আলাদা রাজনৈতিক দলের কর্মী।’’ চাঁচলের এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতরা হলেন উত্তম মহালদার, শক্তি মহালদার, তপন মহালদার ও দীপঙ্কর মহালদার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ছিল অধিবাস অনুষ্ঠান। এ বার কীর্তনের মূল দায়িত্বে ছিলেন সনাতন এবং তাঁর কয়েক জন সঙ্গী। রাতে সনাতনরা কিছু ক্ষণ আসরে ছিলেন না। তাঁদের অনুপস্থিতিতে সেখানে গিয়ে মাইকের শব্দ কমিয়ে দেন উত্তম ও শক্তি। এরপর তাঁরা বাড়ি চলে যান। আসরে এসে বিষয়টি জানতে পেরে কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে উত্তমের বাড়িতে যান সনাতন। কেন তিনি মাইকের শব্দ কমিয়েছেন তা জানতে চাইতেই দুপক্ষে তুমুল বচসা ও পরে হাতাহাতি লেগে যায়। ওই সময় উত্তম দলবল সহ সনাতনের উপরে হাঁসুয়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় হাঁসুয়ার কোপে আহত হন গণেশ, প্রমোদ ও রাজু মহালদার।
কীর্তনের আসরের অদূরে প্রত্যেকেরই বাড়ি এক রকম পাশাপাশি। সনাতনের চিৎকারে তাঁর মা পার্বতীদেবী ছুটে এসে বাধা দিলে তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। হাঁসুয়ার কোপে মেরুদণ্ড দু’ফাঁক হয়ে ঘটনাস্থলেই সনাতনের মৃত্যু হয়। পুলিশ রাতেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। কীর্তন স্থগিত হয়ে গিয়েছে।
স্ত্রী লতিকা এবং চার বছরের এক সন্তান রয়েছে সনাতনের। ঘটনার আকস্মিকতায় শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন লতিকা। কোনওক্রমে বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে থেকেই আমার স্বামীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। দাদাগিরি করলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু আমার স্বামী তো গুন্ডা নয়। কয়েক জন প্রতিবেশী জানিয়েছিলেন, মাইকে শব্দ শোনা যাচ্ছে না। সে কথা বলতেই উত্তমের বাড়িতে গিয়েছিলেন আমার স্বামী।’’
তৃণমূল নেতা তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘সনাতন নির্বাচনে সক্রিয় ভাবে কাজ করেছিল। একটা তরতাজা যুবককে বিজেপি এ ভাবে খুন করবে ভাবতেই পারছি না।’’ বিজেপির সঞ্জিতবাবুর বক্তব্য, ‘‘কীর্তনের কর্তৃত্ব কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়ে বিবাদের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে।’’