Trihana Tea Garden

মালিক-শ্রমিক চাইলেও বন্ধ চা বাগান, আঙুল উঠছে তৃণমূলের একাংশের দিকেই

ত্রিহানা চা বাগানের মালিকের তরফে দাবি করা হয়েছে, চা বাগানের পাশে বয়ে চলা বালাসন নদী থেকে বেআইনি ভাবে বালি-পাথর তোলা হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩৭
Share:

ত্রিহানা চা বাগান। — নিজস্ব চিত্র।

খুলছে না ত্রিহানা চা বাগান। বাগান মালিক আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের একাংশের দিকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বন্ধ চা বাগান খোলার কথা বলেছেন। শ্রমিকদের বোনাস সমস্যা মেটানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে বাগানের মালিকই অভিযোগ করছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের একাংশও মেনে নিয়েছে সেই অভিযোগ। এই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

Advertisement

ত্রিহানা চা বাগানের মালিকের তরফে দাবি করা হয়েছে, চা বাগানের পাশে বয়ে চলা বালাসন নদী থেকে বেআইনি ভাবে বালি-পাথর তোলা হচ্ছে। সেগুলি বাগানের ভিতর দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই পাচার আটকে দেওয়ার কারণে তৃণমূলের শ্রমিক নেতাদের ‘রোষে’ পড়তে হয় বাগান কর্তৃপক্ষকে। যার জেরে বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হয় চা বাগান। এর পর গত অক্টোবরে বোনাস নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বাগানে ১৯ শতাংশ বোনাসের বদলে ১৮ শতাংশ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে। তবে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন বেঁকে বসায় বোনাস দেওয়া যায়নি। অভিযোগ, ক্ষেপিয়ে তোলা হয় শ্রমিকদের। তৃণমূল নেতাদের মদতেই বাগানে অস্থিরতা তৈরি করা হয়। এই পরিস্থিতিতে গত অক্টোবর থেকেই বাগানে অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু হয়। তৈরি চা বাজারে পাঠানোর কাজ আটকে যায়। বাগানে এখন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ৮৫ হাজার কিলোগ্রাম চা। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তাঁরা।

ত্রিহানা চা বাগানের অন্যতম ডিরেক্টর বিমল ঝাওয়ার বলেন, ‘‘দুর্নীতিমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্যই ত্রিহানাকে বন্ধ করে রাখছে শ্রমিক সংগঠনের একাংশ। ভুল বোঝানো হচ্ছে শ্রমিকদের। চার-পাঁচ জনের একটি দল নিজেদের কোটি কোটি টাকার অবৈধ খননের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ত্রিহানাকে ব্যবহার করছে। রাজ্যের কাছে অনুরোধ, গোটা বিষয়টি স্বচ্ছতার সাথে খতিয়ে দেখা হোক।’’ অন্য দিকে, দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসির সম্পাদক রঞ্জন চিক বরাইক বলেন, ‘‘মালিক পক্ষ-সহ শ্রমিকেরাও বাগান খুলতে চাইছে। কিন্তু তৃণমূলের একাংশ নাকি বাগান খুলতে বাধা দিচ্ছে। রাজ্য সরকারের কাছে আমার আবেদন, দ্রুত বাগান খোলার ব্যাবস্থা করা হোক। যাঁরা বন্ধের পক্ষে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাব রাজ্যের কাছে।’’ তিনি এ বিষয়ে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি নির্জল দের দিকে সরাসরি আঙুল তুলেছেন। তবে নির্জলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

Advertisement

আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘একাধিক বার বৈঠক হয়েছে ত্রিহানা চা বাগানকে ঘিরে। বেশ কিছু বৈঠকে মালিকপক্ষ উপস্থিতই হয়নি। প্রায় ৩০ কোটি টাকার মত পিএফের টাকা বাকি রয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়৷ সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও টাকা মেলেনি৷ ত্রিহানা সম্পর্কে রাজ্যের শ্রম দফতরে অসংখ্য অভিযোগ। যাঁরা শ্রমিকদের টাকা নিয়ে লড়াই করছেন, তাঁদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে লড়াই করছেন, তাঁদের বদনাম করার চেষ্টা করছে ত্রিহানার মালিক পক্ষ।’’ দুই পক্ষের টানাটানিতে বিপাকে শ্রমিকেরা। এখনও জানেন না কেন বন্ধ বাগান? কবে খুলবে, সেই নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন