কুলিক সেতু ভেঙে তখনও ঝুলছে ট্রাকটি। ছবি: গৌর আচার্য।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি দশচাকার ট্রাক রায়গঞ্জের কুলিক সেতুর রেলিং ভেঙে ঝুলে থাকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়াল। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ ওই ঘটনায় সেতুর ভেঙে ট্রাকের নীচের যন্ত্রাংশ ও দু’টি চাকা রেলিংয়ের লোহায় আটকে যায়। পুলিশ ও দমকল কর্মীরা ট্রাকটি উদ্ধার করতে হিমশিম খান। শেষ পর্যন্ত চারটি রিকভারি ভ্যানের সাহায্যে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ট্রাকটি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দুর্ঘটনার জেরে এ দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ রাখে পুলিশ। ফলে এ দিন তিন ঘণ্টা উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জাতীয় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। হয়রানির শিকার হন বিভিন্ন দূরপাল্লা রুটের বাসযাত্রীরা।
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘ট্রাকটিকে আটক করে একটি পথ দুর্ঘটনার মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতা থেকে গুয়াহাটিগামী একটি কাপড় কাচার সাবানের গুঁড়ো বোঝাই ওই ট্রাকটি সেতুতে ওঠা মাত্রই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান দিকে গিয়ে রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা মারে। বিহারের বাসিন্দা চালক জিতেন্দ্র সিংহ ট্রাকের ভিতরে আটকে পড়ে চিৎকার শুরু করেন। চালক-সহ প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ট্রাকটি দুলতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চালককে কোনও মতে ট্রাক থেকে নামান। জিতেন্দ্রবাবুর দাবি, ‘‘সেতুতে ওঠা মাত্রই ট্রাকটির ব্রেক ফেল ও স্টিয়ারিং লক হয়ে যায়। সেই কারণে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।’’
দুর্ঘটনার জেরে সেতুর রেলিং-সহ রাস্তার একাংশ ভেঙে গিয়েছে। দুর্ঘটনার পর পুলিশ যাওয়ার আগেই শিলিগুড়ি ও কলকাতাগামী বিভিন্ন যাত্রীবাহী গাড়ি, ট্রাক-সহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চালকেরা আতঙ্কে সেতুর দু’দিকের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দেন।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাকটির একেবারে পিছনেই ছিল কলকাতা থেকে শিলিগুড়িগামী একটি বেসরকারি বাস। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাসিন্দা বাসের যাত্রী রত্না সরকার বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার জেরে ঘণ্টা তিনেক জাতীয় সড়ক বন্ধ ছিল। আশপাশের এলাকায় দোকান না থাকায় অনেক যাত্রী প্রচণ্ড গরমে এক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে গিয়ে খাবার ও জল কিনতে বাধ্য হয়েছেন।’’
খবর পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে যান রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। স্থানীয় সমাজসেবী দীপঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে একদল বাসিন্দা তাঁর কাছে অভিযোগ করে জানান, দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের অভাবে সেতুটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে যে কোনও সময়ে সেটি ভেঙে পড়তে পারে। মোহিতবাবু বলেন, ‘‘কুলিক সেতু ভেঙে গেলে উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সেতুটির স্থায়ী সংস্কারের ব্যাপারে অনেক আগেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তৎপর হওয়া উচিত ছিল। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সেতুটির সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘কেন্দ্র রাজ্যকে ওই রাস্তা হস্তান্তর করলে অনেক আগেই রাজ্য পূর্ত দফতর কুলিক সেতুর স্থায়ী সংস্কারের কাজ করে দিতে পারত। ২০১৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকার কেন্দ্রের ক্ষমতায় ছিল। তখনও কিছু হয়নি।’’