ডালখোলা বন্ধ থাকলে কারা সুবিধা পায়, দেখুক প্রশাসন

পুলিশের অন্দরেই কান পাতলে সেই কাহিনি শোনা যাচ্ছে। ট্রাক চালকদের কয়েকজনের অভিযোগ, যানজট থাকলে নাকি পুলিশকর্মীদের একাংশের লাভই হয়।

Advertisement

কিশোর সাহা

ডালখোলা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৩:০২
Share:

সারি: ট্রাকের সারি প্রতিদিন এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে ডালখোলায়। নিজস্ব চিত্র

ডালখোলা নিয়ে বেশ ক্ষোভ রয়েছে লরি-ট্রাক চালকদেরও। সেই ক্ষোভে সামিল হয়েছেন অনেক স্থানীয় বাসিন্দাও। এমনকি, পুলিশের একাংশও তাতে সায় দিচ্ছেন।

Advertisement

তাঁদের বক্তব্য কী?

পুলিশের অন্দরেই কান পাতলে সেই কাহিনি শোনা যাচ্ছে। ট্রাক চালকদের কয়েকজনের অভিযোগ, যানজট থাকলে নাকি পুলিশকর্মীদের একাংশের লাভই হয়। তাতে নথি পরীক্ষার নামে ট্রাক পিছু হিসেব আদায়ের সুবিধা হয় বলেও অভিযোগ। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা গড়ে ২ হাজার ৪০০ ট্রাক পরীক্ষা করলে অনেকের ক্ষেত্রেই নথিপত্রে ত্রুটি মেলে। ট্রাক চালকদের একাংশের বক্তব্য, কত জনের ত্রুটি মেলে, ক’জনের জরিমানা হয়, সেটা ভিডিয়ো ফুটেজে ধরে রাখলেই বোঝা যাবে কোথাকার জল কোথায় গড়াচ্ছে। তাঁদের দাবি, যানজট বহাল থাকলে কারা সুবিধা পাবে, তা-ও কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে।

Advertisement

যদিও জেলা পুলিশের তরফে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশের উত্তরবঙ্গের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ‘‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত হবে। বাতাসে অভিযোগ ভাসিয়ে পুলিশকে বিব্রত করার চেষ্টাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না।’’ তবে পুলিশের ওই কর্তা মানছেন, ট্রাফিক বিভাগের আরও তৎপরতা দরকার।

যানজটের কবল থেকে মুক্তি পেতে অনেকে বিকল্প রাস্তা ‘বেঙ্গল টু বেঙ্গল’ রোড ধরে যেতে চেষ্টা করেন। ধনতলা থেকে দোমহনি, বোতলবাড়ি পর্যন্ত হল বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোড। বেসরকারি বাসের চালক মিঠুন মোহান্ত প্রায় ১০ বছর ধরে রায়গঞ্জ-শিলিগুড়ি রুটে চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘বেঙ্গল টু বেঙ্গল যেতে পারলে ঘোরাপথ হয় ঠিকই, কিন্তু যানজট এড়ানো যায়।’’ কিন্তু, ওই রাস্তায় বাস চলানো এখন বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। বেসরকারি গাড়ির চালক স্নেহাশিস দে জানান, এক মাস আগে গোপালপুর এলাকায় একটি এনবিএসটিসি বাসে দুর্ঘটনায় পড়ে। একজনের মৃত্যু হয়। তার পর থেকে প্রশাসনের নির্দেশে ওই বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোডে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আরও একটি ছোট রাস্তায় রয়েছে। তা হল, গোয়াগঞ্জ থেকে কানকি। সে পথে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু, গাড়ি চালকরা কয়েকজন জানান, স্থানীয়রা ও পুলিশ হয়রান করে। রাস্তা ছোট। পাশ মেলে না। কারণ, পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে না।

পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, ডালখোলায় যানজট সামাল দেওয়ার জন্য আলাদা করে ১০০ জন পুলিশকর্মী দেওয়া হয়েছে। সে জন্য যানজট আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে বলে ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন। কিন্তু, পুলিশ ভিআইপিদের সফরের সময়ে রাস্তা যানজট মুক্ত রাখে, সেই প্রশ্নে জেলা পুলিশের কর্তা জানান, সে সময়ে ডালখোলা, রায়গঞ্জ, জেলা পুলিশের সদর দফতরের পুলিশকর্মীরা প্রায় ৩০০ জন নজরদারি করেন। তাতেই পরিস্থিতি যানজট মুক্ত থাকে।

পুলিশের শীর্ষ কর্তারা জানান, শীঘ্রই উত্তর দিনাজপুর জেলার ট্রাফিক ব্যবস্থার হাল ফেরাতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে।

কবে বৈঠক হবে, সমস্যা মিটবে সেই আশায় বসে রয়েছেন রায়গঞ্জ-শিলিগুড়ি রুটের হাজার-হাজার যাত্রী। এনবিএসটিসির গাড়ির সফিকুল হক জানান, শুধু তাঁদের সংস্থার ৬০০ গাড়ি ডালখোলা দিয়ে যাতায়াত করে। কলকাতা, বিহার ও লাগোয়া এলাকা থেকে রোজ ৫০০টি বাস যাতায়াত করে ডালখোলা দিয়ে। সকলেই বিরক্ত। ডালখোলা পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ গোস্বামী বলেন, ‘‘আমি কোনও যুক্তি সাজানোর পক্ষপাতী নই। এটা বলতে পারি, যতদিন না বাইপাস হচ্ছে, ততদিন যানজট থাকবে। তাই পুরসভার তরফ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দেওয়া হয়েছে। আমরা অসহায়।’’

রাজ্যের শাসক দলের ডালখোলার অন্যতম নেতার অসহায়তাই বলে দিচ্ছে আমজনতা যানজটের হাত থেকে কবে রেহাই পাবে তা কেউ জানে না।

(শেষ)

সহ প্রতিবেদন মেহেদি হেদায়তুল্লা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন