দুপুর থেকেই রাস্তায় ঘোরাফেরা করছিল ওরা। সন্ধের অন্ধকার নামতেই ঠাণ্ডায় কাঁপতে শুরু করে দু’জন। এরপরেই টনক নড়ে শিলিগুড়ির মহানন্দা পাড়ার বাসিন্দাদের। সাত আট বছর বয়সের দুই বালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। জানতে পারেন একটু অপেক্ষা করতে বলে ওদের বাবা চলে গিয়েছে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দুই বালকের পরিবারের কেউ খোঁজ করতে না আসায় ওদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন বাসিন্দারা।
তার আগে অবশ্য দু’জনের জন্য শীতের পোশাক এবং খাবারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে চলে আসেন এলাকার কাউন্সিলর তথা শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পরিষদের সদস্য কমল অগ্রবালও। শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে খবর দেওয়া হয়। রাতে দুই বালককে একটি হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই বালক নিজেদের নাম ও বাবার নাম বলতে পেরেছে। তারা জানিয়েছেন তাদের বাবার নাম সন্তোষ বর্মন। তবে কোথায় বাড়ি তা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে বলেও দু’জন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের জানায়। কাউন্সিলর কমলবাবু জানিয়েছে, ‘‘পুলিশের হাতে বাচ্চাদের তুলে দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সঙ্গেও কথা বলেছি। বাচ্চাগুলি যাতে কোনওভাবেই অযত্ন না হয় তা দেখতে বলেছি।’’
সূর্য সেন পার্কের গেটের পাশে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে দুই বালককে ঘোরাফেরা করতে দেখে বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। সন্ধ্যের পর ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে দু’জন। একজন কেঁদেও ফেলে। তখনই এলাকার কয়েকজন ওদের ডেকে নাম পরিচয় জানতে চায়। একজনের নাম সুমন এবং অন্য জন নিজের নাম নলিন বলে জানায়। বাবার নামও বলতে পারে। এ দিন রাতে পুলিশের ভ্যানে বসে পাউরুটি খেতে খেতে সুমন বলে, ‘‘আমাদের বাড়ির পাশে আজান হয়। নতুন পাড়ায় থাকি।’’ কিছুক্ষণ থেমে বলে, ‘‘না, জায়গাটার নাম নয়াবাজার।’’ বাড়ির কথা জানতে চাইলে নলিন বলে, ‘‘মা মারা গিয়েছে। বাবা আবার বিয়ে করেছে।’’
বিষয়টি জানাজানি হতেই এগিয়ে আসেন বাসিন্দারা। কেউ বাড়ি থেকে শীতের সোয়েটার নিয়ে আসেন, কেউ বা জামা। দুই ভাইকে পাউরুটি, ক্যাডবেরি, ডিমসেদ্ধ খাইয়ে দেন বাসিন্দারা। এলাকার বাসিন্দা সাথী গুহ বলেন, ‘‘ফুটফুটে বাচ্চা দু’টোকে কেউ এ ভাবে ছেড়ে যেতে পারে ভাবতেই পারছি না। আমরা কী দিয়েছি সেটা বড় কথা নয়। ওরা ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছতে পারলেই হবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে শিশু কল্যাণ সমিতিকে খবর দেওয়া হয়েছে। আজ, শুক্রবার কাউন্সেলিং করে ওদের বাড়ি চিহ্নিত করার ব্যবস্থা হবে।